(ডান দিকের ছবিতে) ফরজেম শেখ। —নিজস্ব চিত্র।
চার মেয়ে, দুই ছেলে, দুই ছেলের বউ, আর নাতনি মিলিয়ে মোট ১০ জনের সংসার। চলতি বছরে এপ্রিল মাসে মেয়ের বিয়ে। টানাটানির সংসারে বাড়তি রোজগারের আশা কলকাতায় কাজ করতে এসেছিলেন ফরজেম শেখ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রবিবার বানতলার লেদার কমপ্লেক্সের ম্যানহোলে নেমেছিলেন। নাকি দু’-তিন গুণ বেশি টাকা পাওয়া যায়! পরে সেই ম্যানহোল থেকেই উদ্ধার হল বৃদ্ধের নিথর দেহ।
মুর্শিদাবাদের লালগোলার আইমারি ভাটাপাড়ার বাসিন্দা বছর ষাটের ফরজেম। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ২০ ডিসেম্বর কাজে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ফরজেম। স্থানীয় এক ঠিকাদারের সূত্রে বেলঘরিয়ায় প্রথমে কাজে গিয়েছিলেন। স্ত্রী আরফান্নুসা বিবি জানান, পরে তাঁরা জানতে পারেন কলকাতায় পাইপ লাইনের কাজ করছেন ফরজেম। বাড়ি ফিরে দুয়ারে সরকারে বার্ধক্যভাতার জন্যেও আবেদন করার কথা ছিল তাঁর। তার আগেই ওই ঘটনা ঘটে গেল।
স্ত্রী আরফান্নুসা বলেন, ‘‘আমাদের ১০ জনের টানাটানির সংসার। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মেয়ের বিয়ে দেবে বলেছিল। টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছিল। প্রতিদিন সকালে নাতনির সঙ্গে ফোনে কথা বলে কাজে যেত। আমায় বলেছিল এক সপ্তাহ বাদে বাড়ি আসবে।’’
ঠিকাদারের মাধ্যমে রবিবার বাবা মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন ছেলে জাহাঙ্গির আলম। সেই ঠিকাদারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা। পরে থানা থেকে যোগাযোগ করে ফের ফরজেমের মৃত্যুর খবর জানানো হয় পরিবারকে। এর পরেই পরিবারের কয়েক জন কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন।
জাহাঙ্গি বলেন, ‘‘আমার চার বোন। এক বোনের বিয়ে আছে সামনেই। আমরা দুই ভাই সে ভাবে কিছু করি না। বোনের বিয়ের জন্যেই টাকাপয়সা জোগাড় করছিলেন বাবা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবে সব শেষ করে ফেলবে, বুঝতে পারিনি। সরকার আমাদের সাহায্য করুক।’’