রক্ত দিচ্ছেন ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল ছবিটা!
শনিবার রাতে ‘এবি’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত না পেয়ে ওঁরা ভেঙে পড়েছিলেন, ‘‘এ ভাবেই কি জানটা চলে যাবে?’’
রবিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপালের শয্যায় শুয়ে বছর পঞ্চান্নের আনারুল শেখ বিড়বিড় করছেন, ‘‘ও লোক শুধু পুলিশ নয় গো, সাক্ষাৎ ফেরেস্তা!’’ যা শুনে হাসছেন বেলডাঙার ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘ওঁরা আবেগে এ সব বলছেন। আমি আমার কর্তব্যটা করেছি মাত্র।’’
জলঙ্গির বাসিন্দা আনারুল বেশ কিছু দিন থেকে রক্তাল্পতায় ভুগছেন। শনিবার তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে দাঁড়ায় ৪.১। শ্বাসকষ্ট-সহ নানা সমস্যা শুরু হয় ওই প্রৌঢ়ের। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে আসা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ‘এবি’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত ছিল না। তামাম জেলা ঢুঁড়েও ওই গ্রুপের রক্ত মেলেনি।
রক্তের অভাবে আনারুলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতায় ‘রেফার’ করার সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে আনারুলের জন্য রক্তের খোঁজ শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। রক্তদাতাদের নিয়ে তৈরি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য বেলডাঙার ওসি জামালউদ্দিন নিজেও।
রবিবার সকালে সেখান থেকেই তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর নিজের রক্তের গ্রুপও ‘এবি’ নেগেটিভ। আর সময় নষ্ট করেননি তিনি। থানা থেকে গাড়ি নিয়ে সটান বেরিয়ে পড়েন মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে। সেখানেই তিনি রক্ত দেন আনারুলকে। ওসি-র রক্ত পেয়ে এখন বিপন্মুক্ত আনারুল। তাঁকে আর কলকাতায় নিয়ে যেতে হয়নি।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের চিকিৎসক কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘‘হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৪.১ এ নেমে এলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। রোগীর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বে়ড়ে যায়। শুরু হয় শ্বাসকষ্টও। আনারুলকে এই বিরল গ্রুপের রক্ত দিতে আর একটু দেরি হলে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারত।’’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘জামালউদ্দিন যা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষের বিপদে, প্রয়োজনে আমরা সব সময়ে পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’ আর আনারুলের ভাইপো জামানুল শেখ বলছেন, ‘‘কয়েকটা ঘণ্টা যে কী ভাবে কেটেছে তা আমরাই জানি। ওই পুলিশ অফিসারের ঋণ আমরা কোনও দিন শোধ করতে পারব না।’’