আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরবঙ্গে।
উত্তরবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগে চিকিৎসক মহল। যেখানে উত্তরবঙ্গের দুই জেলা আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে এক জনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না, ১৫ দিনের মধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াইশো ছাড়িয়েছে! শুধু এই দুই জেলাতেই নয়, মালদহ পর্যন্ত উত্তরের আট জেলায় দ্রুত হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। বার বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফের নতুন করে ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
গত এক মাসে করোনা আক্রান্তের নিরিখে উত্তরবঙ্গের চিত্রটা আমূল বদলে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ— এই আট জেলায় গত ১০ মে সংক্রমণ ছিল হাতে গোনা। সব মিলিয়ে ৩১ জন। মৃত্যু হয় ২ জনের। কিন্তু এক মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৯৫ জন হয়েছে। সেই তুলনায় অবশ্য মৃত্যু বাড়েনি। চার জন এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছে।
কিন্তু ১৫ দিন আগেও এতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ছিল না এই আট জেলায়। আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলায় এক জনও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ১০ জুন স্বাস্থ্য দফতের বুলেটিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দুই জেলায় যথাক্রমে ৩৮ এবং ২১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আট জেলায় ২৭ মে মোট আক্রান্ত ছিল ১৯৭ জন। মাত্র ১৫ দিনেই এই জেলাগুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৮ জন।
আরও পড়ুন: ফের জম্মু কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনার গোলা, নিহত সেনা জওয়ান
লকডাউন ঘোষণার সময় থেকেই পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র, ব্যবসা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১০ মে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে সাত জন করে আক্রান্ত ছিলেন। জলপাইগুড়িতে মাত্র ৪ জন। উত্তর দিনাজপুরে ৪ জন আক্রান্ত হলেও, দক্ষিণ দিনাজপুরে শূন্য। মালদহে ১০ জন। এর মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। বেড়েছে ল্যাবরেটরির সংখ্যা। হয়েছে বেশি পরিমাণে কোভিড-১৯ টেস্টও। ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে বলে মনে করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
২৭ মে-র হিসেব ধরলে, মালদহে একলাফে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৬। ১৫ দিন পরে অর্থাৎ ১০ জুন সেই সংখ্যাটা আরও বেড়ে হয়েছে ২৩৫ জন। প্রায় দ্বিগুণ। তবে সেই তুলনায় দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি। ২৭ মে-র পর থেকে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতোই বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ১০ জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী, শৈল শহর দার্জিলিঙের আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮, কালিম্পঙে ২৩, জলপাইগুড়িতে ১০১। উত্তরবঙ্গে কালিম্পঙের এক মহিলার শরীরে প্রথমে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে বিধায়ক কিনতে পঁচিশ কোটির টোপ দিচ্ছে বিজেপি, অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের
রাজ্যের এই মুহূর্তের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক কৌশিক চাকী এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফের আমাদের সংগঠনের তরফে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি দিয়েছি। বহু মানুষকে এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। রোগীরা যাতে সহজেই হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে পারেন, তার জন্য কোথায় কী ওয়ার্ড রয়েছে, সেখানে শয্যা খালি আছে কিনা, সে বিষয়ে একটি ডিসপ্লে বোর্ড থাকা উচিত।”
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ