রাজ্যের কাটোয়া-বিজ্ঞপ্তি

১৯৭ একর কিনতে অক্টোবরে শিবির এনটিপিসির

কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য অবশেষে রাজ্য সরকারের হাতে থাকা ১০০ একর জমি এনটিপিসি-র হাতে তুলে দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি ১৯৭ একর জমি সরাসরি কৃষকদের থেকে কিনে নিতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাটোয়ায় শিবির বসাচ্ছে এনটিপিসি। তাদের দাবি, জমি-মালিকদের অধিকাংশ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে জমি দিতে আগেই রাজি হয়েছেন। তাই জমি কিনতে কোনও সমস্যা হবে না। বেশি সময় লাগারও কথা নয়।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প চত্বর। —ফাইল চিত্র।

কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য অবশেষে রাজ্য সরকারের হাতে থাকা ১০০ একর জমি এনটিপিসি-র হাতে তুলে দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি ১৯৭ একর জমি সরাসরি কৃষকদের থেকে কিনে নিতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাটোয়ায় শিবির বসাচ্ছে এনটিপিসি। তাদের দাবি, জমি-মালিকদের অধিকাংশ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে জমি দিতে আগেই রাজি হয়েছেন। তাই জমি কিনতে কোনও সমস্যা হবে না। বেশি সময় লাগারও কথা নয়।

Advertisement

তবে জমির সমস্যা মিটলেও বিদ্যুৎ তৈরির কয়লা কোথা থেকে আসবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। যে কারণে প্রকল্পে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রও মেলেনি এখনও। তাই অনিশ্চয়তা পুরোপুরি কেটে গেল—তা এখনই বলতে নারাজ সংস্থার কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, প্রকল্প নির্মাণের কাজ কয়েক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই আর দেরি না করে দ্রুত নির্মাণ কাজে হাত দিতে চান তাঁরা। নবান্ন সূত্রে অবশ্য খবর, কাটোয়া প্রকল্প নিয়ে বিশেষ আগ্রহী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়লা সমস্যা মেটাতে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলেছেন।

কাটোয়া প্রকল্পে এত দিনে উৎপাদন শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, মানছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারাই। তাঁদের বক্তব্য, কাটোয়ায় ১,৬০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ গড়ার পরিকল্পনা ছিল এনটিপিসি-র। এ জন্য বাম আমলে প্রথম পর্যায়ে ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়। ঠিক ছিল, প্রকল্পের বাকি জমিও অধিগ্রহণ করে দেবে সরকার। রাজ্যে তার আগেই পালাবদল হয়। তৃণমূল সরকার জানিয়ে দেয়, আর এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করা হবে না। বাড়তি জমি কিনেই নিতে হবে সংস্থাকে।

Advertisement

নবান্নের কর্তাদের বক্তব্য, নতুন সরকারের জমি-নীতির কারণে এই আমলে বড় শিল্প হয়নি। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য কোথাও কোনও বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে দেয়নি। বিনিয়োগ টানতে সরকারের হাতে থাকা জমি গিয়েছে শিল্প সংস্থার হাতে— এমন উদাহরণও নেই। বরং নবান্নের জমি-নীতি ও নানা শিল্পাঞ্চলে শাসক দলের একাংশের ‘নেতিবাচক ভাবমূর্তি’র জন্য শিল্প-পার্কে যেতেও বিশেষ আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

রাজ্য ভূমি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, একমাত্র সরকারি প্রকল্প হলে রাজ্যের জমি দেওয়া হচ্ছে। তবে তার উদাহরণও বেশি নয়। যেমন, মমতা-সরকারের কাছে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য যত জমি চাওয়া হয়েছে, তার সামান্যই দেওয়া হয়েছে গত সাড়ে চার বছরে। তবে রেলের প্রকল্পগুলির ভাগ্যে এখনও শিকেয় ছেঁড়েনি। ভূমি দফতরের কর্তারা জানান, কাটোয়া প্রকল্পের জন্য রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করে দিলে রাজ্যে ১,৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হতো। সরকার তাতে রাজি নয় বলেই এনটিপিসি প্রকল্পের আকার ছোট করে এখন ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট (মোট ১,৩২০ মেগাওয়াট) তৈরি করবে বলেছে।

কেন এই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ১০০ একর জমি দিতে রাজি হল নবান্ন? বিদ্যুৎ-কর্তাদের একাংশের মতে, জমি নিয়ে রাজ্যের গোঁড়ামিতে এক সময় প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এই একটি প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। তা ছাড়া, সরকারের নীতি মেনে প্রায় জমি কেনার জন্য স্থানীয় জমি-মালিকদের থেকে সম্মতিপত্রও আদায় করে রেখেছিল এনটিপিসি। তাই ১০০ একরের মতো জমি দিতে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী, বাকি জমি কিনে নিতে হবে এনটিপিসি-কে।

পশ্চিবঙ্গে প্রকল্পটিকে ধরে রাখতে সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরীর ভূমিকার কথাও বলছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, এক জন বাঙালি হিসেবে এ রাজ্য সম্পর্কে সহানুভূতির জন্যই অরূপবাবু প্রকল্প-সংক্রান্ত জট ছাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এক শিল্প-কর্তার কথায়, ‘‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে বা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনটিপিসি-র। এ জন্য অন্য সব রাজ্যই জমির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। তবু কাটোয়া প্রকল্পের জন্য জমি কিনতে রাজি হয়েছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা, বলতে হবে রাজ্যবাসীর কপাল ভাল।’’

কাটোয়া প্রকল্প নিয়ে নবান্নের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— প্রকল্পের জন্য এনটিপিসি-র হাতে বর্তমানে যে জমি রয়েছে (বাম আমলে অধিগৃহীত ৫৫৬ একর), তার বাইরে ২৯৭ একরের কিছু বেশি জমি তারা ব্যবহার করে পারবে। এর মধ্যে ১৯৭ একর তাদের কিনে নিতে হবে। বাকিটা সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে দেওয়া হবে। এ-ও বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় থাকা ২২ একর জলাভূমির কোনও পরিবর্তন করা যাবে না। কোনও অবস্থাতেই জমির হাতবদল হবে না। জমি কিনতে গিয়ে যাতে জবরদস্তি করা না হয় এবং জমি-মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, সেই সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি (১৯৭ একর) কেনার জন্য ভূমি আইনের ১৪-ওয়াই ধারায় অনুমতি দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

সরকারি সূত্রের খবর, এ সপ্তাহেই এনটিপিসি-র পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল কাটোয়ায় যাচ্ছে। জমি কেনা শুরুর আগে তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবে। মূলত প্রকল্প-লাগোয়া শ্রীখণ্ড ও চুরপুনি মৌজা থেকেই জমি কেনা হবে। জমি কেনা ও আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদ ইতিমধ্যে ৪২ কোটি টাকা অনুমোদনও করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement