শুক্রবার অস্ত্রোপচার হল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমের। তার বাঁ পায়ে বোমার স্প্লিনটারের আঘাতে তৈরি হওয়া ক্ষত শুকোচ্ছিল না বলে এ দিন শরীরের অন্য অংশ থেকে চামড়া নিয়ে পায়ে বসানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, হাকিমের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আরও সপ্তাহখানেক তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। কেবিনে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও অপারেশন থিয়েটারে যাতায়াতের পথে অবশ্য কড়া প্রহরা চোখে পড়েনি। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
বর্ধমানের বিস্ফোরকে এ বার এলটিটিই-র প্রযুক্তির ছাপও খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
যে ধরনের রাসায়নিক বিস্ফোরক বর্ধমানে উদ্ধার হয়েছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় মুছে যাওয়া তামিল জঙ্গি সংগঠন এলটিটিই (লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম)-এর ব্যবহার করা বিস্ফোরকের মিল খুঁজে পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে এনএসজি-র বোমা বিশেষজ্ঞদের।
কিন্তু, এখন তো আর এলটিটিই-র অস্তিত্বই নেই। কোথা থেকে উঠে এল এদের নাম? ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-র প্রাক্তন কর্তা এবং বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “ভুলে যাবেন না, সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের বিস্ফোরণের ঘটনাতেও এলটিটিই-র ছাপ পেয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। সংগঠন হিসেবে এলটিটিই-র এখন আর অস্তিত্ব না থাকলেও যে পাকা মাথার যুবকেরা এলটিটিই-র জন্য বিস্ফোরক বানাতো, তারা রয়েই গিয়েছে।”
গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এক সময়ে এলটিটিই-র হয়ে কাজ করা এই যুবকেরাই এখন মোটা টাকার বিনিময়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, মাওবাদী বা লস্করের মতো জঙ্গিদের বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে নিহত শাকিল বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্য ছিল। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, সম্প্রতি এই সংগঠনও হয়তো মোটা টাকা দিয়ে এলটিটিই-র বিস্ফোরক বানানোর কারিগরি আয়ত্ত করেছে।
কয়েক দিনের তল্লাশিতে বর্ধমানের খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া থেকে পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু রাসায়নিক। এগুলির সবই উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক বানাতে কাজে লাগে। এই রাসায়নিক দেখেই বিস্মিত গোয়েন্দারা। এনআইএ-র বক্তব্য, সামান্য নড়াচড়াতেই ফেটে যেতে পারে এই বিস্ফোরক। যে কারণে, মঙ্গলবার খাগড়াগড়ের দোতলায় উঠে রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-র কাছ থেকে সমস্ত জিনিস বুঝে নিলেও ওই বিস্ফোরক সরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি তারা। এর পরেই বর্ধমানে ডেকে আনা হয়েছে এনএসজি-এর বোমা বিশেষজ্ঞদের। রাসায়নিকগুলি দেখে তাঁরা বলছেন, এই ধরনের রাসায়নিক দিয়ে এক সময় বিস্ফোরক তৈরি করত এলটিটিই।
গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, সম্প্রতি বিস্ফোরক বানানোর কিছু কৌশল ইন্টারনেট মারফত শেখার চেষ্টা করছিল শাকিলরা। খাগড়াগড়-শিমুলিয়ায় তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে, ই-মেল মারফত সেগুলি তাদের কাছে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। পিকরিক অ্যাসিডের মতো বিস্ফোরক যে ইন্টারনেট দেখে বানানো সম্ভব নয়, সে কথাও মানছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক সময়ে সার থেকে আইইডি তৈরি হতো। সেই আইইডি-র ব্যবহার শুরু করে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি। তারাই বিস্ফোরক হিসেবে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার শুরু করে। এখন বিস্ফোরক বানানোর জন্য অত্যাধুনিক রাসায়নিক লেড অ্যাজাইড বা পিকরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হচ্ছে। দীপাঞ্জনবাবুর কথায়, “ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক দিকে বিস্ফোরক বানানোয় এলটিটিই-র এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সঙ্গে আইএসআই-হুজি জঙ্গিদের টাকা ও নেটওয়ার্ক, জামাতদের আত্মবিসর্জনের সঙ্কল্প এবং সর্বশেষে রাজনৈতিক নেতাদের মদত।”