প্রতীকী ছবি।
যুগটা অনলাইনের। বিশেষত অতিমারি সেই অনলাইনকে আরও বেশি সময়োচিত করে তুলেছে। মদের দোকান খোলার আবেদন প্রক্রিয়ায় সেখান থেকে আবার অফলাইনে ফেরার ফরমানে নানা প্রশ্ন উঠছে।
মদের দোকানের লাইসেন্স পেতে আগ্রহীদের এখন থেকে লিখিত আবেদন করতে হবে রাজ্য সরকারের কাছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়ায় এই বদল এনেছে আবগারি দফতর। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের পাশাপাশি এমন পরিবর্তনে শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় থাকবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় জোরদার হয়েছে আধিকারিক মহলেও।
আবগারি দফতরের খবর, মদের দোকান, রেস্তরাঁ ও বার, হোটেল-রেস্তরাঁ-বার, বিদেশি মদের অন-শপ বা তাড়ি-শপের ক্ষেত্রে এত দিন অনলাইনেই আবেদন করা যেত। এখন দফতর সেই পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করে জানাচ্ছে, আবেদন তিনিই করতে পারবেন, যাঁর কাছে সরকারের ‘লেটার-অব-ইনটেন্ট’ (এলওআই) বা সম্মতিপত্র থাকবে।
ওই সম্মতিপত্র পেতে প্রথমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। কী ধরনের ব্যবসা করতে চাইছেন, তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে আবেদনকারীকে। জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-এলাকার চাহিদা, ক’জন যুক্ত থাকবেন, বিক্রির আনুমানিক পরিমাণ ইত্যাদি। জেলাশাসক স্তরে সেই আবেদন যাচাই করা হবে। অর্থাৎ ব্যবসাস্থলটি আইনত বিধিনিষেধের আওতার বাইরে কি না, এলাকার চাহিদা, পুলিশ কমিশনারেট বহির্ভূত এলাকার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য, কমিশনারেট এলাকা হলে তাদের ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা সম্মতির শংসাপত্র ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হবে।
সব ঠিক থাকলে আবেদনকারীর অনুকূলে ‘এলওআই’ প্রদানের সুপারিশ করে আবগারি দফতরের মাধ্যমে সরকারের কাছে তথ্য পাঠাবেন জেলা কর্তৃপক্ষ। সরকার তা খতিয়ে দেখে সম্মত হলে আবগারি কমিশনার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদনকারীর কাছে এলওআই পাঠাবেন। তার ভিত্তিতে আবেদনকারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য আবগারি দফতরের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ধরা যাক, কলকাতায় মদের দোকানের লাইসেন্স পেতে দেড় লক্ষ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। সেটা ফেরতযোগ্য নয়। এলওআই চাওবার সময়েই তারা ৫০% বা ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে আবেদনকারীকে। এলওআই মঞ্জুর হলে বাকি টাকা দিতে হবে লাইসেন্সের মূল আবেদনের সঙ্গে।”
আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, এত দিন তো অনলাইন পদ্ধতিতেই পুরো আবেদন করা যেত। আচমকা তা বদলানো হল কেন? এ ক্ষেত্রে তো আবেদন কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বুঝতে পারবেন না আবেদনকারী। যেটা আগে অনলাইনে আবেদনের পরে সহজেই ‘ট্র্যাক’ করা সম্ভব হত। এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এক আধিকারিক বলেন, “অনলাইনের যুগে এমন অফলাইন পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার যুক্তি বোধগম্য হচ্ছে না। ২০২০ সালের অগস্ট থেকে এমনিতেই বহু আবেদনপত্র জমে গিয়েছে, যেগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তার পরে আবার এই পদ্ধতিতে সেই দীর্ঘসূত্রতা কি আরও বেড়ে যাবে না?”
সোমবার রাত পর্যন্ত এই বিষয়ে আবগারি দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছ থেকে সরকারি ভাবে কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের একটি অংশের যুক্তি, অতীতে যথেচ্ছ ভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাতে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আপত্তি করেছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা আইনশৃঙ্খলার সমস্যাও হয়েছে। তাই লাইসেন্স দেওয়ার আগে ব্যবসা ও ব্যবসায়ীর মনোভাব, ব্যবসার এলাকা, সেখানকার চাহিদা-পরিস্থিতি— সবই আরও নিখুঁত ভাবে যাচাই করে তবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মহলের আরও দাবি, অনলাইন পদ্ধতি পুরোপুরি উঠিয়ে দেওয়া হয়নি। লাইসেন্স পাওয়ার মূল ধাপটাই রয়েছে অনলাইন মাধ্যমে।