গত বছরের ১১ নভেম্বর। সিইএসসি-র হলদিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট হঠাৎই বিকল হয়ে পড়ল। তার জেরে আচমকা বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিল সংস্থার গ্রিডে। বাধ্য হয়ে কলকাতা-সহ আশেপাশের কিছু অঞ্চলে সাময়িক ভাবে লোডশেডিং করে অন্য জায়গা থেকে বিদ্যুৎ এনে অবস্থা সামাল দিতে হল।
২০১৫ সালেরই ২৯ ডিসেম্বর। সিইএসসি-র বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউনিট আচমকা স্তব্ধ হয়ে গেল। গ্রিডে বিদ্যুৎ ঘাটতি হওয়ায় ফের লোডশেডিং করতেই হল। তার পর নানা উপায়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার পর স্বাভাবিক হল সরবরাহ।
মাঝে-মধ্যে একই অবস্থা হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকাগুলিতেও। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কোনও ইউনিট বসে গেলে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয় রাজ্যের গ্রিডে। আর তখনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করে অবস্থা সামাল দিতে হয়।
ভোগান্তি হয় গ্রাহকদের।
এই অবস্থাটাই পাল্টাতে চায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এ ভাবে লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আর পক্ষপাতী নয় তারা। সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করে কমিশন জানিয়েছে, কোনও একটি সংস্থার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট বসে গেলে, অন্য যে কোনও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়ে সেই ঘাটতি মেটাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সেই উৎপাদন বাড়িয়ে যে অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি হয়েছে, সেখানে সরবরাহ করতে হবে। ওই সরবরাহের মূল দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার। রাজ্যের যে এলাকাতেই এই সমস্যা হবে, সেখানে বণ্টন সংস্থাকেই বিদ্যুৎ দিতে হবে। কোথা থেকে সেই বিদ্যুৎ আসবে এবং কোন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্যের ‘স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার’ (এসএলডিসি)। তারা মনে করলে কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ১০৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন বাড়াতেও বলতে পারে।
ধরা যাক আজ, শনিবার, দুপুর ১২টায় হঠাৎই সিইএসসি-র বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু ওই সময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সাগরদিঘি, কোলাঘাট ও বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটগুলি তাদের ক্ষমতার থেকে কম উৎপাদন করছে। বজবজের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগরদিঘি, কোলাঘাট ও বক্রেশ্বরকে এসএলডিসি বলবে দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে ঘাটতি মেটাতে।
কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘যদি দেখা যায় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে উৎপাদন বাড়িয়েও কিছুটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তখন এনটিপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা বা তাতেও না হলে আঞ্চলিক গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রথমে চেষ্টা করতে হবে রাজ্যর নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বাড়িয়ে চটজলদি ঘাটতি মেটানোর। যাতে লোডশেডিংয়ের জন্য গ্রাহকদের হয়রানি না হয়।’’
বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘গ্রাহক পরিষেবার মান আরও উন্নত করতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। তাই একটি ইউনিট বসে গেলে অন্য ইউনিটগুলি তার বিকল্প হিসেবে কাজ করুক, এটাই আমরা চাই।’’
রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম ছাড়াও সিইএসসি, ডিভিসি, এনটিপিসি, ডিপিএস এবং ডিপিএলের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। মূলত নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে বণ্টন সংস্থা রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেয়। এ ছাড়া সিইএসসি, ডিভিসি, ডিপিএল, ডিপিএস নিজেদের এলাকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কখনও প্রয়োজন হলে ওই সংস্থাগুলি বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে ঘাটতি মিটিয়ে থাকে। অনেক সময় সরাসরি গ্রিড থেকেও বিদ্যুৎ নিয়ে চাহিদা মেটায় তারা।
নতুন নিয়মে প্রতিটি সংস্থাকেই সঙ্কটের সময়ে বণ্টন সংস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিতে হবে। পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের যে মাসুল ঠিক করা আছে, সেই দামই বহাল থাকবে।