জেলে যেতে ভয় পাই না, ফের হুঁশিয়ারি মমতার

গত বছর নভেম্বরে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ‘আমরা সবাই চোর’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে কলকাতার রাস্তায় মিছিল করেছিলেন তিনি। ঠিক এক বছর পরে কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বলতে শোনা গেল, ‘‘জেলে যেতে আমি ভয় পাই না। জেলে নিয়ে গেলে তো ভালই! কয়েক দিন বিশ্রাম পাব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৫১
Share:

গত বছর নভেম্বরে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ‘আমরা সবাই চোর’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে কলকাতার রাস্তায় মিছিল করেছিলেন তিনি। ঠিক এক বছর পরে কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বলতে শোনা গেল, ‘‘জেলে যেতে আমি ভয় পাই না। জেলে নিয়ে গেলে তো ভালই! কয়েক দিন বিশ্রাম পাব।’’

Advertisement

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার শহিদ মিনার ময়দানের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল, অসহিষ্ণুতা, ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ এবং জাতীয় অখণ্ডতা নষ্ট করার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বলতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেউ কোথাও মুখ খুললেই তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ইডি বা সিবিআইকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী টেনে এনেছেন, শাহরুখ খানের প্রসঙ্গও। বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘শাহরুখ খানকে পর্যন্ত পাকিস্তানের লোক বলছে! শাহরুখের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল, আপনারা জানেন। ওঁর পিছনেও ইডি লাগিয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, ‘‘কোর্ট যখন-তখন ভয় দেখাচ্ছে। মিঠুন চক্রবর্তী আমার সাংসদ। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পায়। এমন করে ভয় দেখিয়ে রেখেছে!’’

সম্প্রতি অসহিষ্ণুতা বিতর্কে মুখ খুলে হিন্দুত্ব ব্রিগেডের তোপের মুখে পড়েছিলেন শাহরুখ। আর তাঁকে ইডি ডেকে পাঠিয়েছিল আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের কর সংক্রান্ত একটি মামলায়। আবার আর এক অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ মিঠুনের নাম জড়িয়েছিল সারদা-কাণ্ডে। যার পরে গত কয়েক মাস প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন বলিউডের ওই বাঙালি তারকা। এই সব ক’টি বিষয়কে এক বন্ধনীতে এনে ফেলে মমতা এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। যে হুঁশিয়ারির অন্যতম উদ্দেশ্য, জমিয়তের সমাবেশে সংখ্যালঘু জনতার সামনে বিজেপি বিরোধী সুর চড়িয়ে রাখা।

Advertisement

যদিও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আবার জেল প্রসঙ্গ টেনে আনায় তাঁর বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা প্রশ্ন তুলছেন, তা হলে কি তিনি জেলে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন? সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের জামিন সম্প্রতি খারিজ হয়েছে। তাঁকে ওড়িশায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে সিবিআই। এমনকী, শাসক দলের তরুণ নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডাকেও ফের তলব করা হচ্ছে বলে একটি সূত্রের খবর। সিবিআইয়ের এই তৎপরতার প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে আবার জেলে যাওয়ার ‘চ্যালেঞ্জ’ কি না, প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘ধৈর্যের একটা সীমা আছে! ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পরিণতি মারাত্মক হবে। শুধু এখানেই নয়, দিল্লিতেও আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ করব। আপনাদেরও (সংখ্যালঘু) সঙ্গে যেতে হবে।’’ গত বছর জমিয়তের এই সমাবেশকে ঘিরেই শহরের পুলিশের সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সমর্থকদের সংঘর্ষ বেধেছিল। আহত হয়েছিলেন কয়েক জন আইপিএস অফিসার। সেই ঘটনার জন্য পুলিশের মামলা এখনও চলছে। তারই মধ্যে পুলিশমন্ত্রী কী ভাবে জমিয়তের সভায় গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলেও। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সমাবেশ মঞ্চ থেকেই পাল্টা বলেছেন, ‘‘এই প্রশ্নটা আমাকে করা হচ্ছে কেন? আমি কোথায় যাব না যাব, সেটা কে বলে দেবে? গত বছর একটা ঘটনা ঘটেছিল। গোলমাল তো হতেই পারে! এসইউসি-র মিছিলে গোলমাল হয় না? সিপিএমের মিছিলে হয় না? সিপিএম তো পুলিশকে মেরেছে! তা হলে জমিয়তের সভা নিয়ে প্রশ্ন কেন?’’ মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, গত বছর পুলিশি ব্যবস্থার কিছু খামতি থাকায় কিছু অঘটন ঘটেছিল। এ বার বন্দোবস্ত মসৃণ করা হয়েছে। আর তিনি যে ভাবে রামকৃষ্ণ মিশন, গুরু নানকের জন্মদিনে গুরুদ্বার, ঈদের দিনে নমাজ বা বড়দিনে গির্জায় যান, সে ভাবেই জমিয়তের সভায় এসেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement