গড়িয়ায় শিলাবৃষ্টি।—নিজস্ব চিত্র।
এ বার বসন্তে গাঙ্গেয় বঙ্গের আকাশে মেঘের অন্ত নেই! রবিবার সন্ধ্যায় খাস কলকাতায় কালবৈশাখীর মেঘ ছুটে আসে সুদূর বিদর্ভ থেকে! তার সৌজন্যে সারা দিনের গরম থেকে স্বস্তি মেলে অনেকটাই। তবে বিপাকে পড়েন ময়দানে অনশনরত শিক্ষকপদ প্রার্থীরা। ছুটির দিনে বেড়াতে বেরোনো লোকজনও নাকাল হন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন কলকাতায় কালবৈশাখীর সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার। তার জেরে কলকাতা বিমানবন্দরের উড়ান ব্যাহত হয়। কয়েকটি বিমান নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র চলে যায়। দক্ষিণ কলকাতা, সল্টলেক, নিউ টাউনে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। পাঁচ জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। তবে তাতে হতাহতের খবর নেই। লালবাজার জানিয়েছে, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট এবং আরজি কর রোডের মোড়ে একটি গাছের বড় ডাল ট্রামের তারের উপরে ভেঙে পড়ে। তাতে একটি বাস এবং একটি ট্যাক্সি আটকে পড়ে। যাত্রীদের উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গাছের ভেঙে পড়া ডালটিকে কেটে সরিয়ে দেয়। পুলিশি সূত্রের খবর, ঝড়ের দাপটে পর্ণশ্রী এলাকার পাঁচতলা বাড়ির ছাদে বাঁশের প্যান্ডেল ভেঙে পাশের রাস্তায় থাকা বিদ্যুতের তারের উপরে পড়ে। বাগনান ও দেউলটির মধ্যে তার ছিঁড়ে পড়ায় ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বিদর্ভের কাছে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। মেঘ এসেছে সেখান থেকে। ছোটনাগপুরের উপরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেই মেঘ আরও ছোট ছোট মেঘপুঞ্জের সঙ্গে মিশে বড় আকার নিয়ে গাঙ্গেয় বঙ্গে ঢুকে পড়ে। তার দাপটেই পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ‘‘এ দিনের ঝড় আক্ষরিক অর্থেই কালবৈশাখী,’’ বলছেন গণেশবাবু। কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার পরে গাঙ্গেয় বঙ্গের একাধিক জায়গায় কমবেশি ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। তার ফলে রাতে স্বস্তি মিলেছে। এ দিনও রাতের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে যায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের পরে প্রবল হাওয়ায় প্রায় মিনিট ২০ বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়। এর মাঝখানে ইন্ডিগোর দু’টি বিমান কলকাতায় নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে অন্য শহরে চলে যায়। রাতে বিমান দু’টি কলকাতায় ফেরে। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ আমদাবাদ থেকে ইন্ডিগোর কলকাতামুখী একটি বিমান মুখ ঘুরিয়ে গুয়াহাটি চলে যায়। আগরতলা থেকে কলকাতায় আসা ইন্ডিগোর অন্য একটি বিমান যায় ভুবনেশ্বরে। অন্য তিনটি বিমান রানওয়ের কাছে এসেও নামতে না-পেরে ফের উড়ে যেতে বাধ্য হয়। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কলকাতার শহরে নামতে আসা বিমানের ভিড় বাড়তে থাকে আকাশে। এক সময় আকাশে ১০টিরও বেশি বিমান একসঙ্গে নামার জন্য চক্কর কাটতে থাকে।
বিমানবন্দরের খবর, সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে দিল্লি থেকে ভুবনেশ্বর যাওয়া ইন্ডিগোর একটি বিমান ভুবনেশ্বরে নামতে না-পেরে কলকাতায় চলে এসেছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যে ভুবনেশ্বরের আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলেও কলকাতার আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওই বিমানটি আটকে পড়ে শহরে। রাতে সেটি ভুবনেশ্বর উড়ে গিয়েছে।