রায়গঞ্জে অনশনে বিজেপি নেতা
রায়গঞ্জ অথবা উত্তরবঙ্গের কোথাও এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে আমরণ অনশনে বসলেন বিজেপি-র উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুর সওয়া একটা নাগাদ দলের জেলা কার্যালয় সংলগ্ন রায়গঞ্জের মহাত্মা গাঁধী রোডের ধারে রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে আমরণ অনশন শুরু করেন তিনি। শুভ্রবাবুর দাবি, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণের স্পষ্ট আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে তিনি মরতেও প্রস্তুত রয়েছেন।
শুভ্রবাবুর কথায়, ভোটের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম রাজনীতি করে যাচ্ছে। ওই তিন দলের কেউই চায় না রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হোক। বিজেপি এইমস নিয়ে কোনওদিনও রাজনীতি করেনি। তিনি বলেন, ‘‘তাই যতদিন না পর্যন্ত রাজ্য সরকার রায়গঞ্জ অথবা উত্তরবঙ্গের কোথাও এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের স্পষ্ট আশ্বাস দিচ্ছে, ততদিন আমি অনশন চালিয়ে যাব। উত্তরবঙ্গ তথা উত্তরপূর্ব ভারত সহ বাংলাদেশ ও নেপালের বাসিন্দাদের উন্নত চিকিত্সা পরিষেবার স্বার্থে আমি মরতে প্রস্তুত রয়েছি।’’
বিজেপির অন্দরের খবর, রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চার মাস আগে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীর বসন্তপুরে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য ১৮০ একর জমি চিহ্নিত করে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীরা এই বিষয়টি নিয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রচার চালালে দল ব্যাকফুটে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করে এইমসকে হাতিয়ার করেই আগেভাগে আমরণ অনশন শুরু করলেন শুভ্রবাবু।
যদিও বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘একটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে কল্যাণীতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কোনও রাজ্যে সরাসরি জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। তাই রাজ্য সরকার যেখানে জমি দেবে কেন্দ্র সেখানেই হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করতে বাধ্য।’’
শুভ্রবাবুর অভিযোগ, ২০০৯ সালে কংগ্রেস পরিচালিত তত্কালীন ইউপিএ সরকার রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করলেও প্রথমে বামফ্রন্ট ও পরে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার রায়গঞ্জের পানিশালায় প্রশাসনের চিহ্নিত করার ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ না করায় রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের দাবিতে আচমকা আমরণ অনশনে বসার যুক্তি হিসেবে শুভ্রবাবুর দাবি, ২০১২ সালে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে দলের তরফে জেলাশাসককে স্মারকলিপি জমা দিয়ে জেলা জুড়ে পদযাত্রা করা হয়েছে। গত একবছরে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে জেলায় বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনে দল সামিল হয়েছে। তাই বিজেপির হাসপাতাল তৈরির দাবি নতুন কিছু নয়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের দাবি, রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১০ সালে রায়গঞ্জের পানিশালায় এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাজ্যে পালাবদল হওয়ায় সেই প্রক্রিয়া আটকে যায়। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘শুভ্রবাবু অতীতের পাঠ না নিয়ে আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘রাজ্যে মা মাটি সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের সৌজন্য মোদী হাওয়া ভ্যানিস হয়ে গিয়েছে। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক স্বার্থে শুভ্রবাবু আমরণ অনশনের নামে নাটক শুরু করে বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করছেন।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রে কংগ্রেস ও রাজ্যে বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে কেউ কোনও উদ্যোগ নেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর করে কৃষিজমি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরির বিরোধী। চাষিদের জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন পাঠানোরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কেউ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের বিষয়ে উদাসীন থাকতেন, তাহলে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে সিসিইউ, আইসিইউ চালু সহ রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরে দুটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ হত না।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন বামফ্রন্ট রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করেনি। বর্তমানে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের ও বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার যোগসাজশ করে রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির চেষ্টা শুরু করেছে। তাই শুভ্রবাবুর আমরণ অনশনে বসা মানায় না।’’