রাজ্য সরকারের নির্দেশে আগামী ১৬ জুন শিলিগুড়ি পুরসভার নতুন মেয়র নির্বাচনের সভা ডাকা হয়েছে। গত ২০ মে পুরসভার কংগ্রেসি মেয়র সহ অন্য মেয়র পরিষদ সদস্যদের ইস্তফার পরে, কী করণীয় জানতে রাজ্য সরকারের পুরসভা বিষয়ক দফতরকে চিঠি দেন শিলিগুড়ির পুর কমিশনার। সেই প্রেক্ষাপটে পুর দফতর ১৬ জুন দুপুর ১২টায় নতুন মেয়র নির্বাচনের বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিয়েছে। ৫ জুন লেখা রাজ্যের পুর দফতরের যুগ্ম সচিবের চিঠি পেয়ে, প্রস্তুত হচ্ছে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ শনিবার থেকে আগামী ১৪ জুন দুপুর ১টা পর্যন্ত মেয়র পদে নাম প্রস্তাব করার সুযোগ পাবেন কাউন্সিলররা। মেয়র পদের দাবিদার হিসেবে একাধিক প্রস্তাব এলে, গোপন ব্যালটে ভোট হবে। কমিশনার বলেন, “সরকারের পুরসভা বিষয়ক দফতরের নির্দেশ হাতে এসেছে। সেই মতো আগামী ১৬ জুন মেয়র নির্বাচনের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে কী হবে তা জানিয়ে ফের রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”
বিরোধী দলের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত সহ কংগ্রেসের অনান্য মেয়র পরিষদের সদস্যরা, গত ২০ মে ইস্তফা দেন। তার পর থেকেই শিলিগুড়ি পুরসভা ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়ে। নজরদারি এবং পরিকল্পনার অভাবে দৈনন্দিন পুর পরিষেবা তো বটেই পুর প্রশাসনের কাজকর্মও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। এই প্রশাসনিক শিথিলতা কাটাতেই শিলিগুড়ি পুর আইনের ১৪ নম্বর ধারায় নতুন মেয়র নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ অবশ্য এই ভোটে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই নেই বলে জানানো হয়েছে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “আমরা তো ইস্তফা দিয়ে বোর্ড ছেড়ে এসেছি। কাজেই নতুন মেয়র নির্বাচনে অংশ নেব না।” বামেদের তরফেও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “গত পুরসভা নির্বাচনের ফলেই স্পষ্ট হয়েছে যে শিলিগুড়ির বাসিন্দারা আমাদের বিরোধী দলে বসার পক্ষে। সুতরাং নতুন করে মেয়র নির্বাচনে আমাদের অংশ নেওয়ার প্রশ্নই নেই।” দল সূত্রের খবর তৃণমূলের অধিকাংশ কাউন্সিলররা মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে পক্ষপাতী নন। জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, “এখনও চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়ার পরে দলের অন্য কাউন্সিলর ও জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এই অবস্থায় কোনও দলই মেয়র নির্বাচনে অংশ না নিলে, পুরসভায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার।
শহরে জল সমস্যার সমাধান, পুর পরিষেবা দান সহ অচলাবস্থা কাটানোর দাবিতে বাম কাউন্সিলররা এবং যুব কংগ্রেসের তরফে পুর কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া নানা ভাতার টাকা বন্ধ। দ্রুত তা চালুর দাবি জানিয়েছে বাম কাউন্সিলররা। পুরসভার দ্রুত নির্বাচনও দাবি করেছে বামেরা। অন্যদিকে, যুব কংগ্রেসের তরফেও পানীয় জল সহ অন্য পুর পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শহর জুড়ে অবৈধ ভাবে মোবাইল টাওয়ার বসানোরও অভিযোগ করা হয়েছে যুব কংগ্রেসের তরফে। এ দিন পুর কমিশনার আশ্বাস দিয়ে জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে জল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। সেই সঙ্গে মোবাইল টাওয়ার নিয়ে অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কমিশনার জানান।