নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের অনুদানপ্রাপ্ত নিউ ভারতী ক্লাব পরিচালিত বাণেশ্বর শর্ট স্টে হোমেই বিয়ে হল রিনা দাসের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
প্রায় এক দশক আগে পরিবারের শিকড় ছেঁড়া এক নাবালিকার ঠাঁই হয়েছিল কোচবিহারের বাণেশ্বরের একটি হোমে। সময়ের দাবিতে সেই হোমকেই নিজের ঘর বলে ভাবতে শিখেছিল সে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই মাথার উপর এক টুকরো নিজস্ব ছাদ আর তার নীচে একেবারে নিজের একটা সংসারের স্বপ্নও বেড়ে উঠছিল অজান্তেই। নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের অনুদানপ্রাপ্ত নিউ ভারতী ক্লাব পরিচালিত এই বাণেশ্বর শর্ট স্টে হোমেই স্বপ্ন পূরণ হল রিনা দাসের।
বৃহস্পতিবার হোম চত্বরে ফুল ছড়ানো ছাদনতলায় পুরোহিতের পাশে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করে বোকালিরমঠের বাসিন্দা স্টেশনারি দোকানের মালিক সজল ধরের গলায় মালা পড়ালেন তিনি। অন্য আবাসিকরা তো বটেই রীনার সাঁতপাকে বাঁধা পড়ার সাক্ষী থাকলেন প্রশাসনের কর্তারাও। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে উপহার তুলে দিয়ে নবদম্পত্তিকে শুভেচ্ছা জানালেন কোচবিহারের জেলা ও দায়রা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্তও। তিনি বলেন, “এই তরুণীকে জীবনের স্বাভাবিক স্রোতে এনে দেওয়ার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নবদম্পত্তির সুখী জীবন কামনা করি।”
হোম সূত্রেই জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুন্ডিবাড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে পুলিশ রিনা দাসকে উদ্ধার করেছিল। নাবালিকা রীনা সে সময় নিজের নামটুকু ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি। পরেও নানা সময়ে হোম কর্তৃপক্ষ বহু চেষ্টা করেও রিনার ঠিকানা উদ্ধার করতে পারেনি। হোমের উদ্যোগেই পড়াশোনা পাশাপাশি সেলাইয়ের প্রশিক্ষণও নেয় ওই তরুণী। স্বনির্ভরতার ওই উদ্যোগের মধ্যেই আচমকা রীনার জন্য পাত্রের খোঁজ মেলে। হোমের এক প্রাক্তন আবাসিক, বোকালিরমঠ এলাকার বাসিন্দা ওই পাত্রের সন্ধান দেন। দুই তরফের সন্মতি নিয়ে ঠিক হয় বিয়ের তারিখ। বৃহস্পতিবারের শুভলগ্নে সামাজিক মতে বিয়ে হয়।
কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন বাণেশ্বরের হোমটিতে ওই তরুণী ২০০৪ সাল থেকে রয়েছেন। নতুন জীবনে ওই তরুণীর যাতে কোন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখা হবে।” আলো ঝলমল হোমে এমন আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের আয়োজনে খুশি নবদম্পত্তিও। নববধূ রীণার কথায়, “পরিবার কি সেভাবে বুঝিনি কখনও। সংসার পাব সেটাও ভাবিনি। পুরোটাই স্বপ্নের মত লাগছে।” খোশমেজাজে থাকা বর সজল ধরের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “আপন বলতে ওঁর কেউ নেই। তাই ওকেই আপন করার সিদ্ধান্ত নিই। কেউ আপত্তি করেনি ভাল লাগছে।”
নিউভারতী ক্লাবের সম্পাদক বাবলু কার্জি বলেন, “আমরা তো এমনটাই চেয়েছিলাম। কন্যাদান করার অনুভূতিটাও ছিল পুরোপুরি আলাদা। শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় খরচ জোগাড়ে সমস্যা হয়নি।” হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মূলত অনাথ, পুলিশে উদ্যোগে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতা, দুঃস্থ মেয়েদের এই হোমে রাখা হয়। বর্তমানে ২৭ জন আবাসিক আছেন। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বিয়ের দিন ২৫ জন বরযাত্রী, হোমের আবাসিক, প্রশাসনের কর্তা থেকে আমন্ত্রিত অতিথি মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন নিমন্ত্রিত ছিলেন। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, ডাল, চিপস, মুড়িঘন্ট, পাঁঠার মাংস, চাটনি, দই, মিষ্টিও।