যুব তৃণমূলের বিক্ষোভ। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের পারদেওনাপুর, বাখরাবাদ, কৃষ্ণপুর ও পার সুজাপুরে ১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গঙ্গার ভাঙনে গত এক সপ্তাহে এক হাজার একরের বেশি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে দায়িত্ব কার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। প্রশাসনের দাবি, ওই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের। উল্টো দিকে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া, ভাঙন রোধ করতে যে পরিমাণ টাকা দরকার, তা-ও তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাথমিক ভাবে ভাঙন রোখার কাজে নেমেছে মালদহ জেলা প্রশাসন।
ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়ে এলাকায় অবশ্য ব্যাপক অসন্তোষ শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে মালদহ জেলা যুব তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ফরাক্কায় গিয়ে ব্যারাজ প্রোজেক্ট অফিস ঘেরাও করে প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজারকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি হুমকি দিয়েছেন, “ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু না করলে যুব তৃণমূল বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।”
ব্যারাজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার জানান, গঙ্গা স্বাভাবিক গতিতে নদীর বাঁদিকে ভাঙছে। সুতরাং ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করলেও তা টিকবে না। এ ছাড়া ওই ১৪ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করতে গেলে ২৮০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তিনি বলেন, “সেই টাকা আমাদের কাছে নেই। এখন গঙ্গা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১৩ লক্ষ কিউসেক জল প্রবাহিত হচ্ছে। এই সময় কোনও প্রতিরোধের কাজই করা যাবে না।”
প্রশাসন সূত্রে দাবি, ফরাক্কা ব্যারেজের আপ স্ট্রিমে ৪০ কিলোমিটার ও ডাউন স্ট্রিমে ৮০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন প্রতিরোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষেরই। এ বছর চকবাহাদুরপুর, ভাঙাটোলা, পুলিদিয়ারা, হোসেনপুরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পাঁচ কোটি টাকার ভাঙন রোধের কাজও করেছিলেন ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েকদিন আগে সেই এলাকাতেও ভাঙন শুরু হয়েছে।
সৌমিত্রবাবুর বক্তব্য, “ভাঙন প্রবণ এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন রাস্তা, স্কুল, বাড়িঘর তৈরি করেছে। এখন যদি যেই এলাকাগুলি ভাঙনে গঙ্গায় তলিয়ে যায়, তার দায় তো আমাদের নয়।” তা ছাড়া, তিনি জানান, গঙ্গা নদীর ডান দিকে মুর্শিদাবাদের অরঙ্গাবাদ ও ধুলিয়ানের মতো জনবহুল এলাকা রয়েছে। ওই এলাকা লাগোয়া গঙ্গার পাড়ে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কালিয়াচক ৩ ব্লকে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করলে ধুলিয়ান, অরঙ্গাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শোনার পরে জেলাশাসক বুধবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে ভাঙন রোখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক জানান, পরে ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের জন্য স্থায়ী কাজ করতে রাজ্য সরকার ও ফরাক্কা ব্যারাজ প্রোজেক্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
পারদেওনাপুর, কুম্ভিরা, পারলালপুর এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ না করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাংসদ কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরীও। তিনি বলেন, কেন ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করবে না, তা জানতে আমি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। যদি ভাঙন প্রতিরোধের কাজ না হয়, তা হলে কংগ্রেস স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”