৭৫ বছরের বেতিয়া টিগ্গা। ১০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এক ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। নদীর ধারের জঙ্গল থেকে শাকপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করে যৎসামান্য আয় হয় আদিবাসী বৃদ্ধার। তা দিয়ে এক বেলা খাবার জোটে, কোনও দিন তাও জোটে না।
ডাঙ্গিধুরার জিবাহান মাহালি। চার বছর ধরে পেটে বড় টিউমার। তাঁর স্ত্রী পিয়ালিদেবী অপুষ্টির শিকার। দু’জনেই কোনও কাজ করতে পারেন না। নদী থেকে শামুক-গুগলি কুড়িয়ে তা বিক্রি করে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
তারাডাঙ্গি কলোনির ৮০ বছরের বিধবা চপলা দাসের ভিক্ষা করে কোন মতে দিন চলে। ডাঙ্গি কলোনির প্রতিবন্ধী মিনু বিশ্বাসের স্বামী অসুস্থ। মাছ ধরার জাল বুনে সামান্য আয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে।
শুধু বেতিয়া, জিবাহান চপলা ও মিনুদেবীই নন গত চার মাস ‘সহায়’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়ায় আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের তুরতুরি পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৩০০ অসহায় দিন দরিদ্র মানুষ এমনই অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ। ডাঙ্গি চৌপথী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধা বকুলি মালাকার দু’মাস আগে অপুষ্টিতে মারা যান বলেও অভিযোগ।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে গ্রামের সহায় সম্বলহীন অসহায় দরিদ্র মানুষদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতেই সরকারি ‘সহায়’ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করে সে খাবার তুলেও দিচ্ছিলেন। ন’মাসের বিলের টাকা না পেয়ে সহায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। চার মাস ধরে তাই বন্ধ ওই প্রকল্প।
এই অবস্থায় তুরতুরি পঞ্চায়েতে এলাকার প্রায় দু’শো বাসিন্দা কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি বিলের বকেয়া টাকা দেওয়া ও সহায় প্রকল্পের কাজ শুরুর দাবিতে তুরতুরি পঞ্চায়েতের প্রধানকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্বনির্ভর মহিলারা। কিন্তু চার মাস ধরে হন্যে হয়ে ঘুরেও বিলের একটি টাকাও পাননি তাঁরা। আলিপুরদুয়ার ২-এর বিডিও সজল তামাং বলেন, “ব্লকের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ঠিক ভাবে সহায় প্রকল্পের কাজ চলছে। তাঁরা বিলের টাকাও পাচ্ছেন। কিন্তু তুরতুরি পঞ্চায়েত সঠিক ভাবে রিপোর্ট না পাঠানোয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিলের টাকা দেওয়া যায়নি। সহায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা যাবে না। পঞ্চায়েতকে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে এবং প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।” পঞ্চায়েত প্রধান অলকা বোস বলেন, “কেন সঠিক রিপোর্ট পাঠানো হয়নি সেটা খতিয়ে দেখে দ্রুত বিলের টাকা মিটিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হব। কার গাফিলতিতে এমনটা হয়েছে তা দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০০৯ সালের জুন মাসে ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের সঙ্গে তুরতুরি পঞ্চায়েতেও সহায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে ৯টি কেন্দ্রে ৫৫০ জন অসহায় দরিদ্রকে দু’বেলা রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু হয়। এক জনের ২০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। দু’বছর পর পাঁচটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বাকি চারটি কেন্দ্র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চললেও ১১ মাসের প্রায় চার লক্ষ বিল না পেয়ে চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী মার্চ থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। মুক্তি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নমিতা রায়, রীতা সরকার, সাধনা স্বনির্ভর দলের অনিমা দাস ও কুসুমকলি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পুস্পলতা মিনজরা সকলেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, “ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পের কাজ চালু রেখেছি। এখন আমাদের হাতে আর টাকা নেই। পঞ্চায়েতের গাফিলতিতে এগারো মাসের বিল বকেয়া। বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করেছি। অসহায় মানুষদের কথা ভাবলে কষ্ট হয়। দ্রুত বিল না মেটালে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”