জলপাইগুড়ি জেলায় বাম শিবিরে ভাঙন অব্যাহত। এ বার ৭ জন সদস্যকে নিয়ে সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান যোগ দিলেন বিজেপিতে। প্রায় এক হাজার সমর্থক নিয়ে দল ছেড়ে বিজেপি শিবিরে নাম লেখালেন আরএসপির অঞ্চল সম্পাদক। সোমবার বিকেলের পরে ময়নাগুড়ির পানবাড়ি জুয়েল ক্লাব ময়দানে রামসাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাম সদস্যদের দল বদলের ঘটনা ঘটে। সিপিএম সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েত সদস্যরা দলের নেতাদের একাংশকে সব জানিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
কৃষক সভার রামসাই অঞ্চল সম্পাদক তথা সিপিএমের ময়নাগুড়ি লোকাল কমিটি সদস্য কেশব রায় বলেন, “ওঁরা যে দল ছাড়বেন সেটা জানি। আমার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তৃণমূলের বাধার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ করতে পারছে না। মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের আটকে রাখার চেষ্টা করিনি।” এদিনের দলবদলের ঘটনার সাক্ষী ছিলেন প্রবীণ সিপিএম সদস্য অজিত সিংহ। তিনি বলেন, “আমরা অসহায়। দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা নিরাপত্তা চেয়েছে। দিতে পারিনি। তাই ওঁরা চলে গেল।”
যদিও সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয়বন্ধু মজুমদার স্পষ্ট কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” আরএসপির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত ঘোষ অবশ্য দলীয় নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যদে দলবদলের ঘটনাকে ‘হুজুগ’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “হুজুগে এখন অনেকে অনেক কিছু ভাবছে ও করছে।”
যদিও হুজুগের অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক বলেন, “বামফ্রন্ট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। মানুষ একমাত্র বিজেপির মধ্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার হিম্মত দেখছেন। তাই দলে দলে আমাদের কাছে আসছেন।” দীপেনবাবু ছাড়াও এদিন বাম কর্মীদের হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দিতে হাজির ছিলেন দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসু, সত্যলাল সরকার, অনুপ পাল প্রমুখ নেতৃত্ব।
বামফ্রন্ট পরিচালিত ১৮ সদস্যের রামসাই গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের দখলে ছিল ৫টি, আরএসপির ২টি, বাম সমর্থিত নির্দল ২টি, কেপিপি ৩টি এবং তৃণমূলের ৬টি আসন। এদিন সিপিএমের ৪ জন, আরএসপির ২ জন এবং বাম সমর্থিত নির্দল ২ জন সদস্য দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। কেপিপির তিন পঞ্চায়েত সদস্য তাঁদের বাইরে থেকে সমর্থনের আশ্বাস দেন। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত বামফ্রন্টের হাত ছাড়া হয়। দলত্যাগীদের মধ্যে আছেন সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান ভুপেন রায়, উপ প্রধান কিরণ ওঁরাও, দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য গীতা রায় এবং প্রতিমা মণ্ডল আরএসপি পঞ্চায়েত সদস্য সনেকা রায় ও জ্যোৎস্না রায়, দলের রামসাই অঞ্চল সম্পাদক মধুসূদন রায়। দলত্যাগী বাম সমর্থিত নির্দলরা হলেন জ্যোৎস্না রায় ও খিতেন রায়। মধুসুদন বাবু বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের হুমকির মুখে পড়ে কোন কাজ করতে পারছি না। নিরাপত্তার জন্য বাধ্য হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।” দলত্যাগী সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “দলের নেতাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য কয়েকবার বলেছি। লাভ হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।”