দিনভর আন্দোলন যথেষ্ট নয়। লড়াইয়ে ফিরতে ভরসা তাই রাতভর আন্দোলন।
সামনেই শিলিগুড়ি পুরসভার নির্বাচন। তার প্রস্তুতি হিসেবে ফ্রন্টকে এককাট্টা করারই মহড়া যেন চোখে পড়ল সোমবার বামেদের অবস্থানে। সুভাষপল্লির নেতাজি মোড়ের অবস্থান মঞ্চে রাতভর জাগলেন নেতা-কর্মীরা। চলল কবিতা, গান। অবস্থানে যোগদান দেখে নেতা-কর্মীদের একাংশ আশা, হতমান সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হলে এমন কর্মসূচিই দরকার।
কয়েক মাস আগে শিলিগুড়ি পুরসভার অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বামেরা রাতভর শিলিগুড়ি পুরসভায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছিল। এ দিন অবশ্য অবস্থানের মাত্রা ছিল আরও ব্যাপক। সারা রাত মঞ্চে ছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য, জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার, আরএসপির জেলা সম্পাদক তাপস গোস্বামী, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ প্রমুখ সমস্ত নেতারাই।
এ দিনের অবস্থানে চমকও ছিল। রাত দু’টোয় অবস্থান মঞ্চেই ফ্রন্টের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। অশোকবাবু বলেন, “অবস্থান যখন হচ্ছেই, সেখানে সবাই থাকছে। তাই আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বামফ্রন্টের শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) ভবন ঘেরাও অভিযানের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক সেরে নেওয়াটাই ভাল।”
বিকেল থেকেই একে একে বক্তৃতা করতে শুরু করেন নেতারা। প্রথমে বক্তৃতা, তারপর গান, তারপর আবৃত্তি। শেষে শুধুই বই হাতড়ে কবিতা পাঠ। সারা রাত জাগতে হবে তো! বিকেলে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি, সারদা কেলেঙ্কারি ও এসজেডিএর সিবিআই তদন্তের দাবি এ সব নিয়ে মঞ্চ ছিল সরগরম। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন দাবি ছিল ব্যানারেই সীমাবদ্ধ।
প্রশাসনের নিয়ম মেনেমঞ্চের বাইরের মাইকের সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাত ১০টার কিছু পরেই। তবে তাতে উৎসাহে ঘাটতি দেখা যায়নি কর্মীদের মধ্যে। বহুদিন পরে বিরোধিতার ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিতে পেরে চনমনে দেখিয়েছে তরুণ ও প্রবীণ দুই প্রজন্মকেই। রাতভর মঞ্চকে ঘিরে থাকতে দেখা গিয়েছে জেলা বামফ্রন্টের শীর্ষ নেত্ৃত্বের অনেককেই। এই আন্দোলন নতুন ‘অক্সিজেন’ দেবে বামফ্রন্ট কর্মী-সমর্থকদের, এমনটাই আশা করছেন নেতারা। বিকেলে লোক ছিল পাঁচশো। সেই সঙ্গে পথ চলতি উৎসাহী মানুষদের ভিড়ে তা আরও বেশি দেখিয়েছে। পথ চলার ফাঁকে একবার অবস্থান মঞ্চ ঘুরে যান কৌতূহলী বাসিন্দাদের অনেকেই। এমনই এক বাসিন্দার টিপ্পনী, “রাতভর আন্দোলন করে ওঁরা যদি ক্ষমতায় আসেন এবং দিনভর ওয়ার্ডের কাজ করেন তা হলে বাসিন্দাদেরই সুবিধে।”
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় অবশ্য ক্রমশ ফিকে হতে থাকে। রাত সাড়ে আটটার পর থেকেই মহিলা কর্মী সমর্থকদের পারিবারিক দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হতে দেখা গিয়েছে। ৯ টার পর ‘একটু ঘুরে আসি’ বলে জানিয়ে আরও অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। তার মধ্যে অনেকেই অবশ্য ঘণ্টা দুই খেয়ে-জিরিয়ে ফিরে এসেছেন অবস্থান মঞ্চে। অনেকে আবার আসেননি, সকাল সকাল যোগ দেবেন বলে। রাত ১০ টা নাগাদ বাড়ি যেতে দেখা যায় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকেও। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি ইনসুলিন নিতে গিয়েছেন। বাড়িতে কাজ আছে বলে ঘুরে এসেছেন প্রাক্তন মেয়র নুরুল ইসলামও। আবার জীবেশ সরকারের মত অনেককে সারারাত মঞ্চেই পায়চারি করতে দেখা গিয়েছে। যাঁরা রাতে ফিরবেন না তাঁদের সকলকেই সকাল সাতটার মধ্যে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে।