বন্ধ পড়ে বারবিশা শিল্প বিকাশ কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
ব্লকের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য ২০০৬ সালে দেড় কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল বারবিশা শিল্প বিকাশ কেন্দ্র। এখন প্রায় পরিত্যক্ত এই কেন্দ্র এসএসবির অস্থায়ী ঠিকানা। আট বছরে ছোট মাঝারি কোনও শিল্পই গড়ে ওঠেনি এখানে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কেন্দ্রে শিল্পই যদি না গড়া হবে, তবে কোটি কোটি সরকারি টাকা অপচয় করা হল কেন?
জেলা শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার শিক্ষিত বেকারদের স্বনির্ভর করবার লক্ষ্যে কুমারগ্রাম রোডে ১৮ বিঘা জমির উপর বারবিশা শিল্প বিকাশ কেন্দ্র গড়া হয় ২০০৬ সালে। কেন্দ্রীয় একটি যোজনার দেওয়া দেড় কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের মত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয় এখানে। বিদ্যুৎ, পানীয়জল, রাস্তাঘাট, নিকাশি-সহ সমস্ত পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়। তারপরেও বেশ কিছু ফাঁকা জমি রয়েছে এখানে।
জেলা শিল্প দফতরের তত্ত্বাবধানে তৈরি হলেও পরে ওই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রটি বামফ্রন্ট পরিচালিত কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে এই কেন্দ্রে অটোমোবাইল, ধূপকাঠি , মোমবাতি, মুদ্রণ ও আসবাবপত্র জাতীয় বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু প্রথম চার বছর এমনিই পড়ে ছিল বারবিশা শিল্প বিকাশ কেন্দ্র। ২০১০ সালে ওই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রটিকে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে মাসিক ২০ হাজার টাকায় পাঁচ বছরের জন্য লিজ দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। শিল্প হলে এলাকায় কর্মসংস্থান বাড়বে। ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। তাই আশায় বুক বাঁধেন এলাকার মানুষ। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূরণ হয়নি। কারণ যে সংস্থাকে এই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রের লিজ দেওয়া হয়েছিল তারাও একইভাবে ফেলে রেখেছে কেন্দ্রটিকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় বহু শিল্পোদ্যোগী এখানে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী। অথচ তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ ওই বেসরকারি সংস্থাকে পাঁচ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। কেন তাদের লিজ বাতিল করা হল না সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বারবিশা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, “বারবিশায় শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে শিল্প স্থাপন হলে এলাকার অর্থনৈতিক চেহারা বদলে যেত। অথচ শিল্প বিকাশ কেন্দ্রটি নিয়ে গত সাত বছর ধরে গড়িমসি চালানো হচ্ছে। এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা”
কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তমায়া নার্জিনারী বলেন, “খবরে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও সেইসময় শিল্পোদ্যোগী পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে ওই বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়।” কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন কুমারগ্রামের বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী। এমনকি ওই সংস্থা গত কয়েক মাস ধরে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান তিনি। আপাতত সীমান্ত এলাকা বারবিশার এই কেন্দ্রে এসএসবির জওয়ানদের রাখার জন্য একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকে বলেন, “বারবিশায় শিল্প বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলার এত বছর পরেও কেন সেখানে শিল্প স্থাপন হচ্ছে না সেটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ওই বেসরকারি সংস্থার লিজ বাতিল করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা সেটাও দেখা হবে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পিন্টু গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারোবিশায় শিল্পস্থাপনের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। শিল্প বিকাশ কেন্দ্রটি যে সংস্থা লিজ নিয়েছেন তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শৈবাল মিত্রের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।