রামঘাটের অদূরে মাদ্রাসায় হার তৃণমূলের

বৈদ্যুতিক চুল্লির বিরোধিতার জেরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকা। সেই এলাকার অদূরেই শহরের একমাত্র হাইমাদ্রাসার পরিচালন সমিতির প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টির মধ্যে ৪টি আসনেই হেরে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন প্রার্থীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share:

আলোচনায় ব্যস্ত জয়ী প্রার্থীরা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বৈদ্যুতিক চুল্লির বিরোধিতার জেরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকা। সেই এলাকার অদূরেই শহরের একমাত্র হাইমাদ্রাসার পরিচালন সমিতির প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টির মধ্যে ৪টি আসনেই হেরে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন প্রার্থীরা।

Advertisement

শিলিগুড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে সামসিয়া হাই মাদ্রাসা। রবিবার এই মাদ্রাসায় অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। এই এলাকাতেই রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। তার জেরে আপাতত চুল্লির কাজ বন্ধ রেখেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। রামঘাটের ঘটনার রেশ ওই ভোটের ফলে স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা।

আগামী পুরভোটেও ওই ফলাফলের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদী প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার সহ বিরোধী দলের প্রায় সকলেই। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়িতে পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কর্মিসভায় যোগ দেবেন তিনি। ঘটনাচক্রে, এ দিনই বিকেলে মাদ্রাসায় জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশ মিছিল করার ডাক দিয়েছেন।

Advertisement

জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের দাবি, তাঁদের দল গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। অভিভাবকরা যাঁকে মনে করছেন তাঁকেই ভোট দিয়েছেন। আর এতে রামঘাটের কোনও প্রভাব নেই। ওই মাদ্রাসায় বরাবরই সিপিএম এবং কংগ্রেস শক্তিশালী। কিন্তু এবার বিরোধীদের জোট করতে হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটি আসন জেতায় বোঝাই যাচ্ছে, মানুষ পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছেন। জেলা তৃণমূল নেতা মিলন দত্ত বলেন, “বামফ্রন্ট আমলের মতো জোর করে স্কুল, কলেজের ভোটে জেতার রাজনীতি করি না। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিষেবা বজায় রাখাই আমাদের কাজ। এই ভোটে কোনও গোলমাল পর্যন্ত হয়নি। কংগ্রেস, সিপিএম সুবিধাবাদী জোট করে লড়েছে।”

প্রগতিশীল প্রার্থীদের জোট কোনও রাজনীতির জোট নয় বলে দাবি করেছেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “দলীয়ভাবে তো কোনও জোট হয়নি। এলাকার মানুষ একজোট হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছে। সম্প্রতি রামঘাটে শাসক দল যা করেছে তা গোটা শহরের মানুষ দেখেছে। এর প্রভাব স্কুল ভোট কেন, আগামীদিনের ভোটগুলিতেও পড়বে।”

তৃণমূল কংগ্রেসকে মানুষ আর চাইছে না বলেই স্কুল ভোটে এই ফলাফল হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “সামসিয়া মাদ্রাসায় গোটা শহরের সংখ্যালঘু পরিবারের ছেলেমেয়েদের অনেকেই পড়াশুনো করে। সেখানে অভিভাবক ভোটে তৃণমূলের হার বুঝিয়ে দিয়েছে, মানুষ কী চাইছে।” শঙ্করবাবু জানান, সম্প্রতি ফাঁসিদেওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মহকুমা পরিষদ স্তরে কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর পরেও ঐতিহ্যবাহী ফাঁসিদেওয়া হাইস্কুলে কংগ্রেস সব আসনে জিতেছে।

সামসিয়া মাদ্রাসা সূত্রের খবর, ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটির পরিচালন সমিতির নির্বাচনের আগে ‘কোয়ামি একতা’র ব্যানারে সিপিএম ও কংগ্রেসের লোকজন একজোট হয়। প্রগতিশীল প্রার্থী হিসাবে তাঁরা ৩টি করে আসনে লড়াই করেন। রবিবার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ২৬০ জন। ফল বার হওয়ার পর দেখা যায়, প্রগতিশীলদের পক্ষে মহম্মদ আজহার আসরফি, মহম্মদ আলি হুইসেন, মহম্মদ আনিসুর, এনায়েতুল্লা আনসারি এবং ইয়াসমি বেগম জিতে গিয়েছেন। তৃণমূলের প্রার্থী কাশেম খান শুধু জয়ী হন।

জয়ী প্রার্থীদের তরফে মহম্মদ আজহার আসরফি ও এনায়াতুল্লা আনসারি বলেন, “আমরা ব্যক্তিগতভাবে সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল করি। কিন্তু মাদ্রাসার উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা সবাই একজোট হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছি। কারণ, শাসক দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা জিতলে মাদ্রাসার উন্নয়ন হত না। অভিভাবকেরাও সেটা বুঝেছেন।” দুই জনই জানান, স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে কমার্স, বিজ্ঞান চালু করাই নতুন পরিচালন সমিতির প্রধান লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement