রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে কথা বলছেন ছাত্র-অধ্যাপকেরা। নিজস্ব চিত্র।
ট্রেনযাত্রায় রাতভর দুর্ভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে নিউ কোচবিহারে পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাওয়া উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও অধ্যাপকেরা। শনিবার রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ অবধ-অসম এক্সপ্রেসে নিউ কোচবিহার পৌঁছন তাঁরা। আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ঘটনাটি লিখিতভাবে নিউ কোচবিহারে পুলিশের কাছে জানাবেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকরা সবাই ঠিকঠাকভাবে ফিরেছেন, এটাই বড় কথা। যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বিপদের আশঙ্কা ছিল। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ অক্টোবর কৃষি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে যান দুই অধ্যাপক। শুক্রবার রাতে লখনউ স্টেশন থেকে নিউ কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। এস ৭ ও এস ৮-এর সংরক্ষিত কামরায় বিনাটিকিটের যাত্রীদের ভিড়ে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েন। অভিযোগ, ভিড়ের জেরে নিজেদের নির্দিষ্ট আসনে বসা দূর অস্ত্, ব্যাগ থেকে খাবার বের করা কিংবা শৌচাগারে যাওয়াও কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। উল্টে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলা হয়। এমনকি ট্রেন সমস্তিপুর স্টেশনে পৌঁছলে পরিচিতদের ডেকে সকলকে মারধর করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। আতঙ্কিত ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপকেরা সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি।
ঠিক কীভাবে কেটেছে ট্রেন যাত্রার শুক্রবারের রাত? দুর্ভোগের শিকার এক ছাত্রী তনুরুচি বর্মন বলেন, “রীতিমতো হুড়োহুড়ি করে লখনউ স্টেশনে এস ৭ কামরার উঠতে হয় তখন ভিতরে একেবারে গাদাগাদি অবস্থা। মালকানপুর স্টেশনে ওই কামরায় আরও বহিরাগত লোক ঢুকে পড়ে। তাতে একেবারে দমবন্ধ পরিস্থিতির তৈরি হয়। নিজের আসনে তো বসতে পারিইনি। বন্ধুদের অনেকের আসনও দখল হয়ে যায়। প্রতিবাদ করায় ছেলেদের শাসানো হয়। ওই দলের দুই জন মহিলা মেয়েদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। আতঙ্কে সারারাত ঘুম হয়নি। ব্যাগ থেকে খাবার বের করতে পারিনি। আর এক ছাত্র সৌরভ রায় বলেন, “অন্তত পাঁচশো জন সংরক্ষিত কামরায় বিনাটিকিটে উঠে পড়েছিল। নিজের আসনে বসা দূরঅস্ত, রাতভর গলা শুকিয়ে এলেও জল পর্যন্ত খাওয়ার অবস্থা ছিল না। আমাদের সংরক্ষিত আসন ছাড়তে বলায় ওই বহিরাগতরা রীতিমতো হুমকি দিতে থাকেন। সমস্তিপুর স্টেশনে পরিচিতদের ফোন করে ডেকে এনে সবাইকে দেখে নেওয়ার কথাও বলছিল ওরা। গোরখপুরের আগে পর্যন্ত পুলিশের কোন তত্পরতা ছিল না। সমস্তিপুরে অবশ্য প্রচুর পুলিশ ছিল। তারপরেও চাপা একটা উদ্বেগ ছিল। নিউ কোচবিহারে পৌঁছে খানিকটা স্বস্তি লাগছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে ঘটনার কথা উপাচার্যকে ফোন করে জানান ওই দলের এক অধ্যাপক অমৃত তামাঙ্গ। তারপরেই রেল, প্রশাসন, পুলিশে যোগাযোগ করতে শুরু করেন উপাচার্য। ঘটনার কথা জেনে নিরাপদে সকলকে ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ করেন পরিষদীয় সচিব তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্য রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। শনিবার রাতে তিনি নিউ কোচবিহার স্টেশনে গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায়, সকলের মুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল। ট্রেনে পড়ুয়াদের এমন হেনস্থার কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি। রেল পুলিশের কাছেও ওরা সেভাবে সাহায্য পায়নি। পুরো ঘটনার তদন্ত চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমৃত তামাঙ্গের বক্তব্য, এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।