দীর্ঘ আন্দোলনে পরে বাম আমলে মহকুমা হয়েছিল চাঁচল। তা এক দশকেরও আগের কথা। রাজ্যে পালাবদলের আগেই পুরসভাও ঘোষণা করা হয়েছিল চাঁচলকে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেও ফের চাঁচলকে মহকুমা ঘোষণা করে। কিন্তু এখনও চাঁচলে হয়নি মহকুমা বা পুরসভার কোনও পরিকাঠামো।
দু’দশক ধরে আন্দোলনের পরে ২০০১-এর ১ এপ্রিল চাঁচলকে মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এক যুগের বাম শাসনেও মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তিন বছর আগে তৃণমূল ক্ষমতায় আশার পরও পরিবর্তনের আশায় দিন গুনতে শুরু করেন বাসিন্দারা। এ বছরের জুন মাসে ফের চাঁচলকে মহকুমা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। তার পরেও এখনও মহকুমার একাধিক দফতর গড়ে না ওঠায় নানা প্রশাসনিক কাজে ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মালদহে ছুটতে হয় বাসিন্দাদের। আবার পুরসভা না হওয়ায় রোজকার বাজার থেকে নিকাশি নালা, বেহাল রাস্তাঘাট থেকে পথবাতির মতো নাগরিক পরিষেবার হাল সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “সরকার যা বলবে সেই মতো প্রশাসন কাজ করবে। নানা দফতর রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন তা করবে।” পুরসভা প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, চাঁচলে পুরসভা চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কবে তা চালু হবে তা অবশ্য প্রশাসনেরও অজানা।
মহকুমা গঠনের পর হাসপাতাল নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন বাসিন্দারা। তাঁরা ভেবেছিলেন, কথায় কথায় আর তাঁদের ৭০ কিলোমিটার দূরের মালদহে ছুটতে হবে না। কিন্তু খাতায় কলমে চাঁচল হাসপাতাল মহকুমা হাসপাতাল হলেও চিকিত্সকের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে সামান্য জটিল রোগেও আজও রোগীদের রেফার হয়ে যেতে হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। আবার মহকুমা গঠনের পর চাঁচলে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে ২০ গুণেরও বেশি। অথচ মহকুমা পরিবহন দফতরও চালু হয়নি এ ছাড়া মহকুমা সংশোধনাগার, খাদ্য নিয়ামকের দফতর, তথ্য সংস্কৃতি দফতরও দেড় দশকেও চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মহকুমা সদর-সহ ছ’টি ব্লকের বাসিন্দারা।
প্রশাসনিক সমস্যার পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবাও রয়েছে সেই তিমিরেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে দৈনিক বাজার। সুষ্ঠু নিকাশির অভাবে বৃষ্টি হলেই জলে ভাসে সদরের পথঘাট। অপরিসর বাস টার্মিনাসে জায়গার অভাবে রাস্তার উপরেই বাস, ম্যাক্সি, ট্রেকার, অটো থেকে শুরু করে সব যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনেমাহল রোড, থানা ও বিডিও অফিসগামী রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এতটাই বেহাল যে বৃষ্টি হলেই ডোবায় পরিণত হয়। পুরসভা হলে সেই সব সমস্যা মিটত বলে দাবি বাসিন্দাদের।
এ প্রসঙ্গে চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব দায়ী করেছেন সরকারের ‘অনিচ্ছা’কেই। তাঁর কথায়, “সরকার না চাইলে প্রশাসন আর কী করবে? বামেদের মতো বর্তমান শাসকদলেরও চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে সদিচ্ছা দেখছি না। জেলায় দুই মন্ত্রী রয়েছেন তাঁরাই বা কী করছেন?” মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের পাল্টা প্রশ্ন, “চাঁচলে ৩৩ বছরে বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেস কোন উন্নয়নটা করেছে?” তিনি বলেন, “আমরা বসে নেই। প্রশাসনিক স্তরে পুরসভা চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। মহকুমার অন্য দফতরও চালু করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে।”