মমতার সফরের জন্য বন্ধ থাকবে ৭টি বনবাংলো

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের সময়ে সুকনা থেকে বক্সার জঙ্গল পর্যন্ত ৭টি বনবাংলোর দরজা ২ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত সাধারণ পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন কর্তৃপক্ষ। এই বাংলোগুলিতে যাঁরা ইতিমধ্যেই থাকবেন বলে বুকিং করেছিলেন, তাঁদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন দফতর।

Advertisement

নিলয় দাস

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের সময়ে সুকনা থেকে বক্সার জঙ্গল পর্যন্ত ৭টি বনবাংলোর দরজা ২ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত সাধারণ পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন কর্তৃপক্ষ। এই বাংলোগুলিতে যাঁরা ইতিমধ্যেই থাকবেন বলে বুকিং করেছিলেন, তাঁদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন দফতর। এর আগেই জলদাপাড়ায় ‘কার সাফারি’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বন দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্ধ করা হতে পারে হাতির পিঠে চেপে পর্যটকদের বনাঞ্চল ঘুরিয়ে আনার ব্যবস্থাও।

Advertisement

পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ভরা মরসুমে এমন সিদ্ধান্তে মানুষ যেমন হেনস্থা হবেন, তেমনই ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজিতেও টান পড়বে। অতীতে জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে হলং বন বাংলোয় ছুটি কাটাতে এলে সেখানে পর্যটকদের বুকিং বাতিল করা হত। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এ বার বাম আমলকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, অতীতে জ্যোতিবাবু যে বাংলোয় থাকতেন, কেবল সেই বাংলোটিরই বুকিং বাতিল হত। এ বার সুকনা, গরুমারা, চাপড়ামারি, হলং বনবাংলো ছাড়াও বন উন্নয়ন নিগমের মূর্তি, মংপং এবং রাজাভাতখাওয়ার বাংলো মিলিয়ে ৭টি বাংলোর দরজা পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৭টি বাংলোর মধ্যে ৩টি বন উন্নয়ন নিগমের। কিন্তু বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোগুলি বন্ধ রাখার নজির এক রকম নেই। স্থানীয় এক পর্যটন ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “সরকারের এই সিদ্ধান্তে এ বার ভরা মরসুমে তরাই-ডুয়ার্সের সুকনা থেকে বক্সা পর্যন্ত একটি বিরাট এলাকায় সমস্যায় পড়বেন পর্যটকেরা। এর ফলে ব্যবসায়ীদের প্রচুর ক্ষতি হবে।”

কিন্তু পর্যটকদের জন্য এতগুলি বাংলো কেন বন্ধ রাখা হচ্ছে? বনমন্ত্রী বিনয় বর্মণের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি জানা নেই। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী যাতে তাঁর ইচ্ছে মতো জায়গায় থাকতে পারেন, তাই এই এলাকার সব বন বাংলোগুলিরই বুকিং না দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বন কর্তাদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছি।” মুখ্যমন্ত্রী আজ, সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ি পৌঁছবেন। তার পরে শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যাতে তিনি মন্ত্রী আমলা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মঙ্গলবার বিকালে মাদারিহাটে সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি কৃষক ও মৎস্যজীবীদের উপকরণ বিলি করবেন।

Advertisement

তার পরে কয়েক দিন তাঁর নিখাদ ছুটিতে থাকার কথা। তখন তিনি এই এলাকার যে কোনও বাংলোয় থাকতে পারেন। শুধু বনমন্ত্রী নন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি বিস্তারিত জানা নেই বলে জানান জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও। বলেন, “মাদারিহাটে সরকারি কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এর বাইরে তাঁর কী কর্মসূচি রয়েছে, তা বিস্তারিত জানা নেই।” জলপাইগুড়ি বন দফতরের ডিএফও সুমিতা ঘটক জানান, ইতিমধ্যে গরুমারার বাংলোও রং করে সাজানোর কাজ শেষ। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই তিনটি বাংলো খালি রাখার নির্দেশ দিয়েছি। পর্যটকদের সে সময় অন্যত্র ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।”

তবে হলং-এ থাকলে, জ্যোতিবাবু যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরেই থাকতে পারেন মমতা। লোডশেডিং-এর কারণে যাতে বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ না হয়ে পড়ে সে জন্য জেনারেটারও নিয়ে আসা হয়েছে। হলং নদী পার করে যাতে বাইসন, হাতি বা গন্ডার না ঢুকতে পারে, তাই বাংলোর চারদিকে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে মুড়ে ফেলা হয় রবিবার। বসানো হয়েছে সিসিটিভি। হাতির পিঠে মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলে ঘুরতে চাইতে পারেন। তাই প্রস্তুত রাখা হয়েছে মধুমালা, অনসূয়া, চম্পাকলি, মীনাক্ষীর মতো কুনকি হাতি। ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্যানভাস, রং, তুলিরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement