পাশের হারে পুরনো রেকর্ড ভাঙল টোটো পরীক্ষার্থীরা। গড়ল নতুন রেকর্ড। গত বার আট জন টোটো পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পাশ করেছিল।
এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি গোষ্ঠী টোটোরা। এ বারে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৫ জন, তাদের মধ্যে পাঁচ জন ছাত্রী-সহ পাশ করেছে ১৯ জন। প্রথম বিভাগে কেউ পাশ করতে না পারলেও, একসঙ্গে এতজন টোটো পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক পাশ করা এই প্রথম। ভুটান পাদদেশের ছোট্ট ওই জনজাতি গোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামে স্বভাবতই বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরে খুশীর হাওয়া।
ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল আই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল টোটো ছাত্রছাত্রীদের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “টোটো পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ বেড়েছে। কয়েক বছর ধরে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মেয়েরাও। ওদের সাফল্যে আমিও খুব আনন্দিত।”
১৯৮৯ সালে কোচবিহার জেলার এক স্কুল থেকে টোটোদের মধ্যে প্রথম পাশ করেছিলেন প্রয়াত চিত্তরঞ্জন টোটো। তার পরবর্তী ১৩ বছর আর কোনও টোটো পরীক্ষার্থী সফল হতে পারেনি। ডুয়ার্সের মাদারিহাট ব্লকের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বসবাসকারী টোটোরা আর্থিক ভাবে অসচ্ছল। কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ বা দিনমজুরি। গত পাঁচ বছর ধরে আগের তুলনায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। ২০০৩ সালে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করে সূচনা টোটো। মেয়েদের কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। বর্তমানে সূচনা গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
সূচনার পর গত ১০ বছরে এ নিয়ে ২৩ জন মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করল। তবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছেলেদের সংখ্যা ৬৪ জন। তুলনামূলক ভাবে মেয়েরা পড়াশোনার প্রতি যে ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছর বাদে ছেলেদের সঙ্গে পাশের হারের ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে মিশাদেবী আশাবাদী। টোটোদের গ্রামের ওই প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “রাজ্য সরকার টোটোদের পড়াশোনার আগ্রহ বাড়াতে পদক্ষেপ করেছে। দরিদ্র টোটো পড়ুয়াদের জন্য স্কুলে নিখরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।”
মাধ্যমিকে সফল হবার পর অবশ্য অন্য চিন্তা বারবার মাথায় ঘুরছে প্রিয়া, যোগী, বিজয়, সাগর টোটোদের মাথায়। উচ্চমাধ্যমিক পড়তে হলে গ্রামে তার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিনিয়ত গাড়ি ভাড়া করে হয় মাদারিহাট নতুবা অন্যত্র হস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাতে হবে। পড়াশোনার জন্য সারা মাসে মোটা টাকা খরচ হবে। প্রিয়া টোটোর বাবা দীপকবাবু দিনমজুর। ছয় মেয়ে নিয়ে সংসার। প্রিয়া বড়। দীপকবাবুর কথায়, “খুব কষ্টে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করছি। আমি চাই মেয়ে অনেক পড়ুক। তবে খরচ তো অনেক। জানি না কী হবে।’’ টোটো সমাজের গাব্বু (মোড়ল) সুগ্রীব টোটোর কথায়, “আমার বাবা ঠাকুরদার নামের নামে তৈরি স্কুল করার জন্য সাত বিঘা জমি দিয়েছিলেন। বাবা নিজে পড়াশোনা করেননি। তিনি চাইতেন টোটো ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হোক। আজ বাবা বেঁচে থাকলে এই সাফল্যে তিনি আনন্দ পেতেন।” সুগ্রীববাবুর কথায়, গ্রামের মানুষ অভাবী। তাদের বেশিরভাগের পক্ষে ছেলে মেয়েদের বাইরে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “সরকার যদি বিষয়টি দেখে ভাল হয়।”
অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের পরিষদয় সচিব উইলসন চম্প্রামারী বলেছেন, “টোটো ছেলে মেয়েদের যাতে টাকার অভাবে পড়াশোনা থমকে না যায় তা দেখা হবে।”