অনুমোদনহীন মাদ্রাসার স্বীকৃতির ইস্যুতেও এবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হল কোচবিহারে। অনুমোদনহীন মাদ্রাসার স্বীকৃতির জন্য দলের একাংশের বিরুদ্ধেই অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি জলিল আহমেদ। এরজন্যে সরকারিস্তরে গঠিত কমিটি ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, “স্বীকৃতি দেওয়ার নাম করে যারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের ওই পদে থাকার এক্তিয়ার নেই। জেলা নেতৃত্বের নাম করেও টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ধরণের লোকেরা দলে থাকলে দলের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিতভাবে আমি সব জানাচ্ছি। ওই কমিটিই ভেঙে দেওয়া দরকার।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংখ্যালঘু দফতর জেলা স্তরে কমিটি (ডিএলআইটি) গঠন করেছে। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে কোচবিহারের তৃণমূল নেতা, মাদ্রাসা শিক্ষক বাতেন আলি, জেলা পরিষদ সদস্য ও মাদ্রাসা শিক্ষক মজিবর রহমান এবং সহকারি স্কুল পরিদর্শক চিন্ময় রায় রয়েছেন। সম্প্রতি বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত আবদুল বাতেন আলির বিরুদ্ধে অনুমোদনহীন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে। তিনি প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা তুলেছেন বলে জেলা পরিষদ, সংখ্যালঘু দফতর এবং প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এর ভিত্তিতে জেলা পরিষদ তদন্তও শুরু করেছে।
যদিও বাতেন আলি’র দাবি, “দলের বাকি দুই সদস্যের টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি কিছু করিনি। এটা নিয়ে মাদ্রাসাগুলির মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে।” যদিও কমিটির অপর দুই সদস্য মজিবর রহমান এবং চিন্ময়বাবু পুরোটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের কথায়, “আমাদের নামে তো অভিযোগ করা হয়নি। ওঁর নামে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আর কে টাকা নিয়েছে তা তদন্তে প্রমাণ হবে।”
ঘটনায় জলিল আহমেদের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “আবদুল বাতেনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছে। উনি জলিল আহমেদের ঘনিষ্ঠ। তাঁর সঙ্গেই ওঁকে সবসময় ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। বাতেন কবে দলের সদস্য হয়েছে আমি জানি না। এখন জলিলবাবু এসব বলছেন কেন জানি না।” রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বনমন্ত্রী বলেন, “কেউ অপরাধ করলে শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে। তবে তদন্ত শেষ না হলে অবশ্য কাউকে অপরাধী বলা যায় না।”
সংখ্যালঘু দফতর সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কোচবিহার থেকে স্বীকৃতি চেয়ে কয়েক’শো আবেদন জমা পড়ে। তার মধ্যে ১৪৫টি মাদ্রাসার একটি তালিকা জেলায় পাঠায় সংখ্যালঘু দফতর। এর মধ্যে ১০০টি মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে স্থির হয়। সেগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে কমিটি তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক প্রদীপ্ত ভক্ত বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।”