শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় জাতীয় সড়কের ধারে আবর্জনার স্তূপ। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একদিকে পরিবহণ নগর। পাশেই সিটি সেন্টারে আলোর ফোয়ারা। দেদার বিনোদনের আয়োজন। ঠিক উল্টোদিকে দিনেও যেন অন্ধকার। জলা জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ। গবাদি পশুর মৃতদেহ পচছে। সামনে গেলে দুর্গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম হবে। নাকে রুমাল চাপা দিয়েও কাজ হয় না। ওই আস্তাকুঁড়ের কাছে রাস্তার উল্টোদিকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিস। সেখানকার অফিসার-কর্মীরাও ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু, দূষণ রোধ করতে পর্ষদের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এলাকায় গিয়ে কোনও খোঁজখবর করা হয়নি বলে বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই জানিয়েছেন। বহুবার নানা মহলে বলেও কোনও লাভ হয়নি। তাই এলাকার পড়ুয়াদের একটা অংশ জোট বেঁধেছেন। ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন মাটিগাড়া’ বলে সোস্যাল নেটওয়ার্কে জনমত সংগ্রহের কাজের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তাঁরা। কেউ আবার ‘সেভ মাটিগাড়া’ বলেও সোশ্যাল সাইটে গ্রুপ তৈরি করতে মিটিং ডেকেছেন।
ওই এলাকার তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রাজকুমার থাপা বলেন, “বাম আমলেই ওই জায়গায় আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। তা এখনও চলছে। দুর্গন্ধে-দূষণে আমরা অতিষ্ঠ। রোগ ছড়াচ্ছে। বহুবার নানা মহলে বলেও কাজ হয়নি। কেউ দূষণ কেন ছড়াচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে, তা রোধের উপায় কী হতে পারে সে সব নিয়ে খোঁজখবর করতে পর্যন্ত এলাকায় প্রতিনিধি পাঠাননি। সে জন্য এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে।”
মাটিগাড়ার সব বাসিন্দাই প্রায় একমত, এই এলাকায় আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা জরুরি। বিডিও অফিস থেকে এসডিও দফতর, অফিসার-কর্মীদের প্রায় সকলেই জানেন কী ভয়ঙ্কর দূষণ ছড়াচ্ছে ওই এলাকায়। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও ওই দূষণের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। কারণ, সিপিএম, তৃণমূল এবং কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নানা সময়ে ওই সমস্যার বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেছেন। দলের নেতা-কর্তাদের তরফে আশ্বাস পেলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মাটিগাড়ার কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া রোজই সিটি অটোয় শিলিগুড়ি যাতায়াত করেন। দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্রী বললেন, “আমরা টিএমসিপি-র সমর্থক। কেন আমাদের এলাকার দূষণের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, সেটা ভেবে পাই না।” এলাকার ইতিহাসের স্নাতক আরেক ছাত্রী সিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “এদিকটা ঢেলে সাজছে। ওদিকটায় অন্ধকার বাড়ছে। সরকারকে বুঝতে হবে, ওদিকের দূষণ চরমে পৌঁছলে নানা রোগ ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিটি সেন্টার, পরিবহণ নগরী, হিমাঞ্চল বিহার, উত্তরায়ণেও প্রভাব পড়বে। সে জন্যই আমরা সোস্যাল সাইটে প্রচারের কথা ভাবছি।” মাটিগাড়া গার্লসের দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী নাকে রুমাল চেপে রোজই যাতায়াত করে ওই এলাকা দিয়ে। তাদের কয়েকজন বলে, “ক্লাস ফাইভ থেকে নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করি। এখন দুর্গন্ধ এত বাড়ছে যে সহ্য করা যায় না। মাথা ঘুরতে থাকে।”
মাটিগাড়া কল্যাণ ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন সদস্য অবশ্য অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকা ওই ফাঁকা জমিতে দূষণের জন্য সরকারি অফিসারদের একাংশই দায়ী। ব্যবসায়ীরা জানান, নানা সময়ে জঞ্জাল ফেলার জন্য মাটিগাড়ার বাইরে কোনও এলাকা চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনকে বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতার ফলেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই অলিখিত ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে’ জঞ্জাল তো বটেই, আশেপাশের এলাকায় মৃত গবাদি পশুর দেহও নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে। তা পচে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে পুতিগন্ধময়।
ঘটনাচক্রে, মাটিগাড়া থানা এলাকার মধ্যেই পুলিশ কমিশনারের অফিস। সেখানকার অফিসার-কর্মীদের সকলেই ওই দূষণের ব্যাপারে জানেন। কিন্তু, পুলিশের অফিসারদের একাংশের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে পুলিশের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। মাটিগাড়া বিডিও অফিস, শিলিগুড়ির এসডিও অফিস অথবা দার্জিলিঙের জেলাশাসকের অফিসের অফিসার-কর্মীরা অনেকেই মানছেন, অবিলম্বে ওই দূষণ রোধে সরকারি তরফে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা নিয়ে প্রশাসনের অফিসাররা উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। কিন্তু, কাজের কাজটা আদপে কবে হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান,
‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১