রাজনৈতিক বিরোধের পরে এ বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি প্রশাসনিক সংঘাতে নামল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
গত ২৩ জানুয়ারি দার্জিলিঙে এসে চৌরাস্তা লাগোয়া এলাকায় হর্কাস মার্কেটের শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর মোর্চা পরিচালিত দার্জিলিং পুরসভা বৈঠক করে হর্কাস মার্কেটের নকশা অনুমোদন করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর শিলান্যাস করা প্রকল্পকে পুরসভার অনুমোদন না দেওয়ার ঘটনার অন্য নজির রয়েছে কিনা তা দার্জিলিঙের প্রশাসনিক কর্তারা এ দিন মনে করতে পারেননি। অনুমোদন না দেওয়ার কারণ হিসেবে ন’টি কারণও দেখিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে পরিবেশ এবং কারিগরি বিষয়ে আপত্তি তুললেও, এর পেছনে রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার রাজনৈতিক সংঘাতই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল প্রভাবিত হকার্স সংগঠনের তরফেও এ বিষয়ে মোর্চার বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
হর্কাস মার্কেট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার দার্জিলিং পুরসভার সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। চৌরাস্তা লাগোয়া এলাকায় হর্কাস মার্কেট তৈরি হলে পরিবেশ ঘিঞ্জি হয়ে ওঠা-সহ আরও নানা পরিবেশ সম্পর্কিত কারণ দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা দৌলত সিংহ রাসাইলে-সহ কয়েকজন বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর সেই মামলা দায়ের হওয়ার দু’দিন পরে মামলার প্রথম শুনানি হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট দার্জিলিং পুর কর্তৃপক্ষকে তাদের হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত মার্কেটের নকশা অনুমোদন না করার জন্য পুরসভাকে নির্দেশ দেন বলে জানা গিয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশ এ দিন হাতে পেয়ে পুর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক বৈঠক করে তাদের হলফনামা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ঘটনাচক্রে যে দিন কলকাতা হাইকোর্ট পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সে দিনই পুর কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে হর্কাস মাকের্ট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ দিন দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান অমর রাই বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশমতো পুরসভার পদক্ষেপ নিয়ে হলফনামা পাঠাব। গত ৩ সেপ্টেম্বর পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে হর্কাস মার্কেট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে না। কোন ৯টি কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটিও হলফনামায় উল্লেখ্য করা হবে।”
দার্জিলিঙের এইচ ডি লামা রোড, এন বি সিংহ রোডের ফুটপাতে বসে ব্যবসা করা হর্কাসদের পুর্নবাসন দেওয়ার জন্য সিআর দাস রোডে একটি তিনতলা হর্কাস মার্কেট তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মার্কেটে ৪২টি দোকান তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পুর এলাকার কোনও ভবনের নকশার ছাড়পত্র পুর কর্তৃপক্ষের থেকে নেওয়া বাধ্যতামুলক। সেই মতো গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রশাসন থেকে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
মোর্চা সূত্রের খবর, এইচ ডি লামা রোড এবং এনবি সিংহ রোডের সিংহভাগ ব্যবসায়ীই তৃণমূল প্রভাবিত আস্থা হর্কাস ইউনিয়নের সদস্য। হর্কাস মার্কেট তৈরির বিষয়ে পুরসভার সঙ্গে প্রশাসনিক আলোচনাও হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন অবশ্য পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “রাজনীতির কোনও বিষয়ই নেই। শুধুমাত্র পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ের কারণেই আপত্তি।”
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, যে এলাকায় নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, সেটি ধস প্রবণ বলে চিহ্নিত। সে কারণে নতুন নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ রয়েছে। প্রস্তাবিত মার্কেট কমপ্লেক্স এলাকা পর্যটন এলাকা বলে পরিচিত, সেখানে নতুন নির্মাণ হলে জায়গাটি ঘিঞ্জি হয়ে যাবে বলেও পুরকর্তৃপক্ষ মনে করছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তির কথাও পুরসভার সিদ্ধান্তে উল্লেখ্য করা হয়েছে। পুরসভা জানিয়েছে, চৌরাস্তার নীচেই প্রস্তাবিত মার্কেট তৈরি হওয়ার কথা। সে কারণে মার্কেট তৈরি হওয়ার পরে চৌরাস্তার পরিবেশও ঘিঞ্জি হয়ে পড়বে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
যদিও, পুরকতৃপক্ষের সব যুক্তিই উড়িয়ে দিয়েছেন পাহাড়ে তৃণমূলের হর্কাস সংগঠনের সভাপতি ভরত সুব্বা। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “প্রথমে তো পুরসভা এক সব যুক্তি খাড়া করেনি। এখন শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্য নানা যুক্তি দিচ্ছে পুরকর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হব। তবে আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”