টেবল টেনিসে খেলোয়াড়দের একাংশের বিরুদ্ধে জন্মের শংসাপত্র জাল করে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগে এ বার তাঁদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হল থানাতে। বৃহস্পতিবার ওই অভিভাবকেরা শিলিগুড়ি থানাতে যান। সেখানে পুলিশ কর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এবং ছেলে বা মেয়েদের জন্মের শংসাপত্রের এবং স্কুলে বয়সের যে নথি রয়েছে তা জমা নেন অভিভাবকদের কাছ থেকে। কয়েকজন প্রয়োজনীয় নথি জমা করতে না পারায় তাদের আগামী ৩ দিনের মধ্যেই সে সব জমা করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, যাঁদের নামে অভিযোগ তাঁর হলেন শুভঙ্কর সরকার, অর্ণব অধিকারী, অভীক দাস, সোলাঙ্ক চক্রবর্তী, সর্বজিত্ গুহ, অঙ্কিতা বিশ্বাস, এবং দীক্ষা বিশ্বাস। যে অভিভাবকেরা এ দিন থানাতে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অভীকদাসের মা জয়শ্রী দেবী, অঙ্কিতা বিশ্বাসের বাবা সুব্রত বিশ্বাস, সর্বজিত্ গুহ’র বাবা সিদ্ধার্থবাবু, শুভঙ্কর সরকারের বাবা সুজিতবাবু, সোলাঙ্ক চক্রবর্তীর বাবা স্বপনবাবু, অর্ণব অধিকারীর বাবা অসীমবাবু, দীক্ষা বিশ্বাসের মা রীতা দেবী। জয়শ্রী দেবী বলেন, “থানায় গিয়ে দেখা করে এসেছি। এ ছাড়া কোনও ব্যাপার নেই।” অসীমবাবুর দাবি, “কোচবিহারে রয়েছি। থানায় যেতে পারিনি। তবে কেন এ ধরনের অভিযোগ উঠছে বুঝতে পারছি না।” সুব্রতবাবু জানান, তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে তিনি সমস্ত নথি থানাতে দিয়ে এসেছেন। স্বপনবাবুকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা বলব।” সুজিতবাবু, রীতা দেবীর মোবাইলে ফোন করা হলে রিং বেজে গিয়েছে। সর্বজিতের বাবা সিদ্ধার্থবাবুর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “ভুল নম্বরে ফোন করেছেন।” তাঁর আরেকটি মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে রিং বেজে গিয়েছে।
শিলিগুড়ির অপর এক টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের বাবা জিতেন জানা গত ২২ অক্টোবর শিলিগুড়ি থানায় ৭ জন খেলোয়াড়ের নামে জন্মের শংসাপত্র জাল করে বয়স ভাড়ানোর অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতেই পুলিশ প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগে এ ব্যাপারে মামলা রুজু করেছে। ওই সমস্ত অভিযোগগুলি একাংশ জমিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ, খেলোয়াড়দের একাংশ বাড়িতে জন্ম হয়েছে বলে অন্য জায়গা থেকে শংসাপত্র নিয়ে দাখিল করছেন। অথচ প্রাথমিক স্কুলে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে তা অন্য। আবার কারও জন্মের একাধিক শংসাপত্রের হদিস পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশের তরফে নর্থবেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের অভিভাবকদের এ দিন সকালে দেখা করতে বলা হয়। সেই মতো সংগঠনের তরফে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল বলে জানান নর্থবেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা সুব্রত রায়। তিনি বলেন, “পুলিশের তরফে আমাদের বিষয়টি জানানো হলে আমরা অভিভাবকদের তা জানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই মতো এ দিন ওই অভিভাবকদের যাওয়ার কথা।”
শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশ দে শহরের বাইরে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “জিতেনবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই খেলোয়াড়দের অভিভাবকদের এ দিন ডাকা হয়েছিল। থানার তদন্তকারী অফিসার তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।” জিতেনবাবু এর আগেও সিবিআই এবং টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার কাছে ১৭ জন খেলোয়াড়ের নামে একই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। এমনকী অভিযুক্ত অথবা অপর কোনও টেবল টেনিস খেলোয়াড় ফেডারেশনের কাছে জন্মের যে শংসাপত্র জমা করেছেন তা সঠিক না থাকলে আত্মপক্ষ সমর্পণ করে যথাযথ জন্মের শংসাপত্র জমা করার কথাও জানানো হয়েছিল। গত ১০ নভেম্বরের মধ্যে সে সব জমা করার কথা। ফেডারেশনের তরফেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বয়স ভাড়ানোর অভিযোগের প্রমাণ মিললে তাঁদের তরফেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপের কথা জানানো হয়নি। জিতেনবাবু বলেন, “কিছু খেলোয়াড় বয়স ভাড়িয়ে যে ভাবে সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে তা উচিত নয়। কিছু লোকের প্রচ্ছন্ন মদতে এই প্রবণতা বাড়ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ হবে না।”