ভোটের গেরোয় আগেই বন্যা রোখার কাজ

সরকারি ভাবে পয়লা জুন থেকে বর্ষার শুরু ধরা হয়। তবে আবহাওয়া দফতরের নথিতে জৈষ্ঠ্যের শুরুতে অর্থাৎ মে মাস থেকেই উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই বাঁধ মেরামতি, নদীর পাড় বাঁধাই-সহ প্রাক বর্ষার কাজ শুরু করে সেচ দফতর।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৮:০৯
Share:

সরকারি ভাবে পয়লা জুন থেকে বর্ষার শুরু ধরা হয়। তবে আবহাওয়া দফতরের নথিতে জৈষ্ঠ্যের শুরুতে অর্থাৎ মে মাস থেকেই উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই বাঁধ মেরামতি, নদীর পাড় বাঁধাই-সহ প্রাক বর্ষার কাজ শুরু করে সেচ দফতর। তবে সময়ে উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীতেই একসঙ্গে ভাঙন শুরু হওয়ায় সব নদীতেই কাজ করতে হয়। তবে এ বছর লোকসভা নির্বাচন থাকায় বন্যার ভ্রুকুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি খরচে বিধি নিষেধ। নির্বাচনী বিধির গেরো এড়াতে তাই তিন মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে রাজ্যের সেচ দফতর।

Advertisement

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বছরের শুরু থেকেই নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছিল। বিশেষত উত্তরবঙ্গকে নিয়েই উদ্বেগ বেশি ছিল। বর্ষার ঢের আগে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিতে নদীগুলিতে জল বেড়ে ভাঙন শুরু হয়। তাই নির্বাচন ঘোষণার আগেই উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্য জুড়ে ৫৯৯ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।” সেই মতো বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো ২৯৪টি প্রকল্পের জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছে সেচ দফতর। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে সামগ্রিক বন্যা মোকাবিলার জন্য ৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে সেচ দফতর। মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকেই সেচ দফতর থেকে প্রতিটি জেলায় নির্দেশ পাঠিয়ে বর্ষার সময়ে প্রয়োজনীয় কাজের টেন্ডার আগেই সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেচ দফতরের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরও। দফতরের সিকিমের দায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “বর্ষা আসতে জুন মাস। তবে তার আগেই উত্তরবঙ্গে প্রাক বর্ষার পরিস্থিতি তৈরি হয়। মূলত সূর্যের তাপ, আর্দ্রতা এবং নিম্নচাপ তৈরি হওয়া এই তিনের কারণে মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।”

Advertisement

যে সব নদী নিয়ে উদ্বেগ: গঙ্গা, তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, রায়ডাক ১, রায়ডাক ২, মহানন্দা, ফুলহার, কংসাবতী,অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর, সুবর্ণরেখা।

রাজ্যে মোট বন্যা প্রবণ এলাকা: ৩৭, ৬৬০ বর্গ কিলোমিটার

অসংরক্ষিত এলাকা, আশঙ্কা সর্বাধিক: ১৫, ৬৫৫ বর্গ কিলোমিটার

ঘটনা হল, লোকসভা ভোট ঘোষণার দিন থেকেই সারা দেশে আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি বলবৎ হয়ে যাবে। সে সময় নতুন কোনও প্রকল্পের অনুমোদন, কাজ শুরুর নির্দেশ তো দূরের কথা, প্রকল্প ঘোষণা করাও সম্ভব নয়। নদী ভাঙন ঠেকানোর মতো কাজে অবশ্য নির্বাচন কমিশন থেকে বিশেষ অনুমোদন জোগাড় করা সম্ভব। কিন্তু ভাঙন শুরু হয়ে যাওয়ার পরে অনুমোদন জোগাড় করতেই কয়েকদিন লেগে যায়। দফতরের প্রবীণ অফিসারদের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলছে। ফলে, ততদিনে ভাঙন আরও বাড়বে। উপরন্তু, উত্তরবঙ্গের নদীগুলির গতিপ্রকৃতি আরও ভাবিয়ে তুলেছে সেচ আধিকারিকদের।

দফতরের অভিজ্ঞতায়, ফি বছর বর্ষায় তিস্তার ভাঙন সামাল দিতে দিতেই, হয়ত জলঢাকার ভাঙন শুরুর খবর চলে আসে। আবার মহানন্দার ভাঙন না থামতেই শুরু হয় যায় ফুলহারের তাণ্ডব। রায়ডাক শান্ত হতেই গর্জে ওঠে তোর্সা। সে সময়ে একের পর এক কাজের জন্য কমিশনের অনুমোদন জোগাড় করতেই বড় ক্ষয়-ক্ষতি ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বন্যার আগে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ১২০০ কিলোমিটার নদী বাঁধ সংস্কার এবং পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়। গত বছরের বর্ষাতে যার মধ্যে সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি সামাল দিতে বর্ষার মধ্যেই কাজ শুরু করতে হয়েছিল সেচ দফতরকে।

উত্তরবঙ্গে আগেভাগে বর্ষা শুরুর কথা মাথায় রেখেই তাই সর্তক হয়ে চলতে চাইছে সেচ দফতর। বর্ষার সময়ে যে এলাকাগুলিতে ফি বছর ক্ষতি হয়, সেখানে বর্ষার সময়ের কাজের টেন্ডার চলতি সপ্তাহেই সেরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যে সংস্কারের কাজের টেন্ডার মে-জুন মাসে হয় সেগুলির টেন্ডারও সেরে ফেলা হয়েছে। সেচ দফতর জানিয়েছে, এই কাজগুলির মধ্যে দোমহনি থেকে মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তা নদীর বাঁধ সংস্কার, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে তোর্সার নদীর বাঁধ সংস্কার এবং পাড় বাধাই করার কাজ, রায়ডাক এবং ফুলহার নদীর পাড়ে বোল্ডার বাধাই এর কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

একইভাবে বর্ষার শুরুর সঙ্গেই যাতে দক্ষিণবঙ্গেও কাজ শুরু করতে অজয়, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী নদীর বাঁধ সংস্কার এবং পাড় বাঁধাইয়ের কাজও ২৯৪টি প্রকল্পে রয়েছে। রাজ্যের নদীগুলির মধ্যে অতি বন্যাপ্রবণ তালিকায় উত্তরবঙ্গের ৮টি নদী রয়েছে। তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাক-১ এবং রায়ডাক ২, মহানন্দা, ফুলহারে ফি বছর বন্যা লেগেই থাকে। সেই সঙ্গে মালদহে গঙ্গা নদী সারা বছরই সেচ কর্তাদের উদ্বেগে রাখে। এই নদীগুলি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের কালজানি, লিস, ঘিস, ডিমার মতো মাঝারি ও ছোট নদীও বর্ষার সময়ে লাগোয়া এলাকা প্লাবিত করে দেয়। সেচমন্ত্রীর কথায়, “আগে থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে বিধির গেরোয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে কাজ করাতে অসুবিধে না হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement