বালুরঘাট-গঙ্গারামপুরের পথে বাস ছিল হাতেগোনা। এ ভাবেই যেতে হয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।
এক বছরের অসুস্থ কোলের শিশুকে নিয়ে সকালে স্থানীয় কালদিঘি মহকুমা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গঙ্গারামপুরের শিববাড়ির গৃহবধু জয়া সরকার। ট্রেকার কিংবা অটো পাননি। রিকশা পর্যন্ত রাস্তায় ছিল না। ফলে, হাসপাতাল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা চড়া রোদের মধ্যে তাঁকে পায়ে হেঁটে কোলের শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা বধূ পাতো দাস ছোট দু’টি ছেলেমেয়েকে নিয়ে বালুরঘাটে গিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি। ফিরতি পথে বাস না পেয়ে তিনি চরম বিপাকে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গঙ্গারামপুর রেল স্টেশন নেমে প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁকেও চরম নাকাল হতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গঙ্গারামপুর সফর ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই একদিকে রায়গঞ্জ এবং অন্যদিকে বালুরঘাট-গঙ্গারামপুরের মধ্যে সমস্ত রকম সরকারি ও বেসরকারী যাত্রী যানবাহন চলাচলের উপর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গোটা গঙ্গারামপুর শহর কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের বাণিজ্য শহর বলে পরিচিত গঙ্গারামপুরের সঙ্গে সড়ক পথে বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হন ছোট ব্যবসায়ীরা।
শহরের চৌপথি মোড় থেকে উত্তর দিকে রাস্তার পাশে রবীন্দ্রভবনে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রশাসনিক বৈঠক করেন। ওই এলাকা ধরেই বাণগড়, শিববাড়ি রোড সকাল থেকেই পুলিশের দখলে চলে যায়। ওই রাস্তায় সাইকেল নিয়ে একজন পথচারীকেও যেতে দেওয়া হয়নি। শিববাড়ি বাজারে ছোট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম সাইকেলে মুদি সামগ্রী নিয়ে গঙ্গারামপুর শহর থেকে দোকানের পথে যেতে গিয়ে বাধা পান। তাকে প্রায় দু-কিলোমিটার ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। শিববাড়ি বাজারে আমিনুলের ছোট মুদির দোকান। তিনি বলেন, “সকালে মালপত্র কিনে দোকান খুলব বলে রওনা হই। চৌপথী মোড়েই আটকে দেওয়া হয়। ফলে একবেলা দোকান খুলে বসতে পারিনি।”
আমিনুল ইসলামের মতো বালুরঘাটের বহু ছোট ব্যবসায়ী থেকে নিত্যযাত্রীদের এদিন সকালে গন্তব্যে পৌঁছতে রাস্তায় নেমে দেখেন বাস উধাও হয়ে গিয়েছে। বুনিয়াদপুরে কমস্থলে যেতে সকাল থেকে বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সোনার দোকানের কর্মী বিপ্লব কর্মকার, শিক্ষক দেবাশিস ধর। বাস না পেয়ে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে হয়। যদিও এ দিন গঙ্গারারামপুর স্টেডিয়ামের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গক্রমে বলেন, “জনগণের অসুবিধা করে ও সমস্যায় ফেলে কোনও কাজ সরকার বরদাস্ত করবে না।
সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে এদিন রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রুটের বাস ভায়া গঙ্গারামপুর হয়ে না চালিয়ে ঘুরপথে মালদহের গাজল হয়ে চালানোর নির্দেশ দেন!। একই নির্দেশ দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের রায়গঞ্জ ডিপো কর্তৃপক্ষকেও। তবে ঘুরপথে বাস চালিয়ে নানা ঝক্কির আশঙ্কায় এ দিন বেসরকারি বাস মালিকেরা রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রুটের ২৫টি বাস বন্ধ রাখেন।
এদিন রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও কর্ণজোড়া বাসস্ট্যান্ডে দিনভর বহু যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন। বাধ্য হয়ে অনেকেই চড়া ভাড়ায় ছোটগাড়ি ভাড়া করে কালিয়াগঞ্জ, কুশুমন্ডি, গঙ্গারামপুর, রামপুর ও ফুলবাড়িতে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জের সাঁওতালপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় মুদি দোকানদার সরকারি নির্দেশের কথা না জেনে এদিন গঙ্গারামপুর যাওয়ার জন্য প্রায় আড়াই ঘন্টা রায়গঞ্জের মোহনবাটিতে অপেক্ষা করেও বাস পাননি। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী গঙ্গারামপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে রায়গঞ্জের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হবে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গঙ্গারামপুর যাওয়ার বাস পেলাম না। পরে বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য দেড় হাজার টাকায় একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে গঙ্গারামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হই।”
(সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য)