চুরি গিয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র। পড়ে রয়েছে কাঠামো। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
একের পর এক বাতানুকূল যন্ত্র ও তার বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরির ঘটনায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া ইউনিট-সহ বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্ম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক মাসে অন্তত ১৬ টি এসি মেশিন চুরি হয়ে গিয়েছে কলেজ ভবন থেকে। পুলিশে অভিযোগ করেও ফল মেলেনি কোনও। পরিস্থিতি এমন যে অনেক ক্ষেত্রে চুরি যাওয়ার পর নতুন করে যন্ত্র বসানোর পরেও ফের তা চুরি হয়ে গিয়েছে। কতবার যন্ত্র চুরি যাবে আর কতবার তাঁরা নতুন যন্ত্র লাগাবেন, এই চিন্তা করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পূর্ত বিভাগ চুরি যাওয়া যন্ত্রের জায়গায় নতুন যন্ত্র বসাতেও আর সাহস পাচ্ছেন না।
এমন ঘটনায় থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের কাজকর্ম চালাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে চারটি বাতানুকূল যন্ত্র ইতিমধ্যেই দু’বার চুরি হয়েছে। ফের নতুন যন্ত্র লাগাতেও ভয় পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তাতে ইউনিটের কাজকর্ম চালাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কেন না ওই ইউনিটে রক্তের নমুনা মজুত রাখা হয়। সে কারণে এসি মেশিন থাকাটা জরুরি। কিন্তু বারবার তা চুরি যাওয়ায় ওই সমস্ত নমুনা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। আপাতত বরফের পাত্রে কোনও রকমে নমুনা মজুত রাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অমিতা গিরি বলেন, “বাতানুকূল যন্ত্র চুরির পর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। যে যন্ত্রে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কি না নির্ধারণ করা হয় সেটি বাতানুকূল ঘরে রাখা জরুরি। যন্ত্র চুরি যাওয়ার পর বাতানুকূল ব্যবস্থা না থাকায় যন্ত্রও ঠিক মতো কাজ করছে না। নমুনা সংরক্ষণেও সমস্যা হচ্ছে।”
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সমীর রায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কী করা দরকার বুঝে উঠতে পারছি না। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। অথচ তারাও কাউকে ধরতে পারছে না। অথচ একের পর এক এসি মেশিন ও তার সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে।” পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনে যন্ত্র চুরি গেলে পুলিশে জানাতে হয়। সেই অভিযোগের প্রতিলিপি নিয়ে ফের দফতরে নতুন যন্ত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। বারবার একই জায়গায় এসি মেশিন বসানোর আবেদন করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নানা জবাবদিহি করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দফতর ভুল বুঝছে। পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “গুরুতর সমস্যা। তবে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। তা ছাড়া ক্যাম্পাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাকর্মীরাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন চুরি হবে।” তবে কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিস্তারিত জানালে তিনি ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
কে বা কারা এই চুরির সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অবশ্য তার কোনও হদিস দিতে পারেনি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে হাসপাতালের সুপারের দফতরের উপর তলায় ইএনটি ওটি’তে লাগানো তিনটি বাতানূকূল যন্ত্র কে বা কারা নিয়ে গিয়েছেন। একেকটি যন্ত্রের দাম ৪০ হাজার টাকার মতো। ২৭ মে থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের ৪টি বাতানূকূল যন্ত্রের বাইরের অংশ খুলে ভিতরে থাকা তামার তার চুরি করে দুষ্কৃতীরা। তাতে যন্ত্রগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। নতুন যন্ত্র লাগানোর প্রয়োজন হয়। জুন মাসে তা লাগানো হয়। ১ অগস্ট থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের ৪টি বাতানুকূল যন্ত্র ফের চুরি করে দুষ্কৃতীরা। তার পর থেকে এই ইউনিটের কাজকর্ম চালাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর পর আর নতুন করে কোনও বাতানুকূল যন্ত্র ওই ইউনিটে লাগানো হয়নি। ২০ অগস্ট পাথলজির ল্যাবরেটরিতে লাগানো ৩টি বাতানুকূল যন্ত্রের বাইরের অংশ খুলে যন্ত্রাংশ চুরি করা হয়। তাতে যন্ত্রগুলি অকেজো হয়ে পড়েছে। এপর ১টি যন্ত্র পুরোটাই চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পরবর্তীতে অধ্যক্ষের ঘরের ৩টি, প্যাথলজির সেমিনার হলের ২টি ও অ্যানটমি বিভাগের ৪টি বাতানুকূল যন্ত্র চুরি যায়।
পূর্ত দফতরের বাস্তুকারদের একাংশ জানান, বাতানুকূল যন্ত্রে একেকটিতে দু-কিলোগ্রামের মতো তামার তার থাকে। তা চুরি করে বাইরে বিক্রি করা হয়। তবে যন্ত্রের ভিতরে যে ‘কমপ্রেসার’ রয়েছে তার নম্বর থাকে। চুরির ওই জিনিস বাইরে বিক্রি করতে সমস্যা হয় বলে অনেক সময় দুষ্কৃতীরা তা নিতে চায় না।