রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে মোটরবাইক।— নিজস্ব চিত্র।
অফিস যাওয়ার সময় রোজই একই সমস্যায় পড়ে তিতিবিরক্ত জীবনবীমা নিগমের জলপইগুড়ি অফিসের কর্মী অনন্যা চক্রবর্তী। নয়াবস্তির বাড়ি থেকে বেরিয়ে শান্তিপাড়ার অফিসে পৌঁছনোর দু’টি রাস্তাএকটি দিনবাজার দিয়ে, অন্যটি রায়কতপাড়া হয়ে।
তিনি বলেন, “যে রাস্তা দিয়েই যাইনা কেন, রাস্তার মধ্যে অবৈধ পার্কিং-এর ফলে যানজট লেগেই থাকে। দিনবাজারে রাস্তায় ট্রাক, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ও দিকে রায়কতপাড়ার দিকের বাসস্ট্যান্ড বাস, মিনিবাস, অটো রিক্সায় ভরা। এর ফলে পার্কিং-এর জায়গার অভাবে ট্র্যাফিক জ্যাম হচ্ছে। নিদিষ্ট জায়গা থাকলেও তা না ব্যবহার করার জন্য আমাদের হয়রান হতে হচ্ছে।”
এই অভিজ্ঞতা কেবল এই অফিস কর্মীরই নয়, জলপাইগুড়ির সমস্ত মানুষের। জলপাইগুড়ির চা কোম্পানির হেড অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং প্রাক্তন খেলোয়াড় সন্তু চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেন, “পার্কিং জোন থাকতেও তা না ব্যবহার করার জন্যই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যাঁর যেখানে খুশি গাড়ি, মোটরবাইক রেখে দিচ্ছেন। দেখার কেউ নেই।”
জলপাইগুড়ি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি শহরে পুরসভা মোট সাতটি পার্কিং জোন করেছে। সেগুলি হল ৩ নম্বর গুমটি, সমাজপাড়া, দিনবাজার, বর্ধন প্রাঙ্গন, পান্ডাপাড়া বউবাজার এবং ডাঙাপাড়ায় দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে অবস্থিত পার্কিং-এর জন্য কোনও ফিও ধার্য করা হয়নি। চার বছর আগে পার্কিং-এর জন্য এই জায়গাগুলি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সেই সাইনবোর্ড এখন অবলুপ্ত। পার্কিং-এর জায়গা করা হলেও সেটির ব্যবহার আবশ্যক করা হয়নি। পুরসভার পক্ষ থেকে পার্কিং-এর জায়গা ব্যবহার করা আবশ্যক করতে কোনও কর্মীও নিয়োগ করা হয়নি।
ফলে শহরের যে কোনও জায়গায় রাস্তার পাশে গাড়ি, ট্রাক এমনকী বাসও রেখে দেওয়া হচ্ছে। দিনবাজারে যখন তখন ট্রাক থেকে মাল ওঠানো নামানো হচ্ছে। মার্চেন্ট রোডে প্রচণ্ড ভিড়ের সময়ে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে দোকান থেকে কেনাকাটা সারা হচ্ছে। রায়কতপাড়ায় বাস স্ট্যান্ডে বাস, মিনিবাস, অটোরিক্সা টোটো সবই দাঁড়িয়ে থাকে। একই চিত্র শহরের সর্বত্র।
জলপাইগুড়ি ট্র্যাফিক বিভাগের ওসি সৈকত ভদ্র বলেন, “পার্কিং জোনগুলি কোথায় করা হয়েছে তা জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “যখন পার্কিং জোন করা হয়েছিল, তখন পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। তারা কোনও পদক্ষেপ করেননি। ট্র্যাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসির পরিবর্তন হয়েছে। যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও আমাদের কাছে রাস্তাঘাটের সমস্যার বিষয়ে কিছু জানতে চাননি। আমাদের কাছে আসলেই পুরসভার রাস্তাঘাট নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানানো হবে।”