তৃণমূলের উল্লাস। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগেই চাপা সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বামেরা। শুক্রবার কোচবিহার কেন্দ্রের ফল প্রকাশের পরে সেই অভিযোগই ফের তুলল বাম শিবির। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই জেলা জুড়ে চাপা সন্ত্রাস চলছে। লোকসভা ভোটের মুখেও ওই সন্ত্রাস মোকাবিলায় সে ভাবে কিছু করা যায়নি।” তবে আত্মসমালোচনাও করেছেন উদয়নবাবু। তাঁর পর্যবেক্ষণে, “রাজ্য বামফ্রন্টের কিছু মুখ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তার প্রভাব ফলে পড়েছে। রাজ্য বামফ্রন্ট নেতৃত্বের খোলনলচে বদলানো দরকার।”
তৃণমূল অবশ্য বামেদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “পুরোপুরি নির্বিঘ্নে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন এ বার। ৩৪ বছরে বাম শাসনকালে যা ঘটেছে, তাতে ওঁদের মুখে সন্ত্রাসের অভিযোগ মানায় না। মানুষ বামেদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।” তাঁর সংযোজন, “এই জয় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থার জয়।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরের খবর, কোচবিহার আসন ধরে রাখার ব্যাপারে দলের অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। দিনহাটা, সিতাই, কোচবিহার (উত্তর) ও মাথাভাঙা বিধানসভা এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন বলে ধারণা ছিল তাঁদের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় কোচবিহার লোকসভা আসনের মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে, সব ক’টিতে বাম প্রার্থীর তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। এমনকী, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায়ের বাড়ি সিতাই বিধানসভা এলাকাতেও ১২ হাজারের বেশি ভোট পান রেণুকা সিংহ। উদয়নবাবুর খাস তালুক দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রেও ৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে রয়েছেন রেণুকাদেবী। কোচবিহার (উত্তর) বিধানসভা কেন্দ্রটিও ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে রয়েছে। সেখানেও বাম প্রার্থীর থেকে প্রায় ২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নির্বাচনী এলাকায় নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বামেরা ১১ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায় বলেন, “মানুষের রায়ের প্রকৃত প্রতিফলন ভোটে দেখা যাচ্ছে না।” জয়ের খবর চাউর হতেই জেলা জুড়ে সবুজ আবিরে অকাল হোলি উৎসবে মেতে ওঠেন তৃণমূল সমর্থকরা। তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী রেণুকা দেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে উন্নয়ন যজ্ঞ শুরু করেছেন। তারই প্রতিফলন হয়েছে এই রায়ে।”
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন। ২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ ভোট বেড়েছে বিজেপি-র। কংগ্রেসের কেশব রায় ৭৪ হাজার ৫৪০ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রার্থী বংশীবদন বর্মন পেয়েছেন ১৩,২০৫ টি ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলে বন্দি থাকাকালীন এই কেন্দ্রে ভোটে লড়ে তিনি পেয়েছিলেন ৩৭,২২৬ ভোট।