ফোর জি নিয়ে আলোচনায় পুরসভার মেয়রের কাছে পারিষদেরা। —নিজস্ব চিত্র।
শহরে ফোর জি পরিষেবার কেবল লাইন পাতা নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ উঠছে তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বর্তমান পুরবোর্ড। মেয়র পারিষদদের দাবি, বিষয়টির আগে পরে যুক্ত না থাকলেও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ওই কাজ নিয়ে বিতর্কের আবসান ঘটাতে মেয়র যদি দ্রুত স্পষ্ট কোনও বার্তা না দিতে পারেন তা হলে বোর্ড ছেড়ে দেওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দিলেন কংগ্রেসের ৭ মেয়র পারিষদ। বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে দেখা করে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র চলছে। বোর্ডকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। আমি এর জবাব দেব।’’ মেয়র পারিষদদের বক্তব্য প্রসঙ্গে অবশ্য গঙ্গোত্রী দেবী কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “নির্বাচন পর্ব মিটলে আগামী ২০ মে’র মধ্যে পারিষদদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তার পরেই যা জানানোর জানাব।”
মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বাদে অন্যান্যরা এ দিন মেয়রের কাছে যান। ডেপুটি মেয়র সবিতা অগ্রবাল, সঞ্জয় পাঠকরা জানান, মেয়র কেবল পাতার কাজের বিষয়টি সম্পূর্ণ জানেন না বলে তাঁদের কাছে দাবি করেছেন। ডেপুটি মেয়র বলেন, “আমরা দ্রুত বিতর্কের আবসান চেয়েছি। অন্যথায় আমরা কেন বদনাম নিতে যাব?” মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক বলেন, “দ্রুত বিতর্কের সমাধান না করা হলে আমরা বোর্ড ছেড়ে দেব বলে মেয়রকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। মেয়র ২০ মে পর্যন্ত সময় চেয়ে আশ্বস্ত করেছেন।” বস্তুত, আগামী অক্টোবরে পুরসভার মেয়াদ ফুরচ্ছে। ৪৭ আসনের পুরসভায় ১১ জন কাউন্সিলর নিয়ে বোর্ড চালাচ্ছে কংগ্রেস। বোর্ড মিটিংয়ের বিভিন্ন প্রস্তাব অনুমোদন করাতে তাই তাদের বিরোধী বা তৃণমূলের কাউন্সিলরদের উপর নির্ভর করেই হচ্ছে। গত বোর্ড মিটিংয়ে তৃণমূল এবং বামেরা প্রস্তাব অনুমোদন করেননি। কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্য সরকারও তাদের উন্নয়ন কাজে সাহায্য করছেন না। তা ছাড়া ১১ জন কাউন্সিলর নিয়ে বোর্ড চালাতে প্রতি পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বোর্ডে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশ এ ভাবে বোর্ডে থাকার পক্ষে নয়। তাঁদের অনেকেই বোর্ড ছেড়ে নির্বাচনে যেতে চাইছেন। কংগ্রেসরই একটি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে তার পরেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে দল। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “শুক্রবার নির্বাচনের ফলাফল রয়েছে। সমস্ত কিছুর ব্যাপারেই প্রদেশ নেতৃত্ব ওয়াকিবহাল। শুক্রবারের পরেই প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।”
কেবল পাতা নিয়ে ২৯ এপ্রিলের বোর্ড মিটিংয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিপিএম কাউন্সিলর দিলীপ সিংহ প্রশ্ন তোলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে কেবল পাতার কাজ চলছে। পুর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন কি না। বোর্ড মিটিংয়ে মেয়র বলেন, ‘তিনি কিছু জানে না।’ এর পরেই বিনা অনুমতিতে কেবল পাতার কাজ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। অথচ এ পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়নি। মেয়রের সঙ্গে দেখা করে আগেই এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন বামেরা। এ দিন তারা ফের যান। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “মেয়র বলছেন তিনি লিখিত ভাবে পুর কমিশনারকে অভিযোগ জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও অভিযোগ হয়নি। মেয়র পারিষদরা বিতর্কের বিষয়টি নিয়ে জানতে পুর কমিশনারের কাছে যান। বাস্তব হল এই যে, যে সংস্থা কাজ করছে তাদের বাঁচাতে চান মেয়র ও তাঁর পারিষদরা। তাই এই সমস্ত নাটক করছেন।”