ব্যবসায়ীদের আপত্তি ত্রিমোহিনীতে

বাজারে নিকাশির নয়া প্রকল্প থমকে

নিকাশির হাল ফেরাতে ত্রিমোহিনী বাজার এলাকায় সদর রাস্তার পাশে হাইড্র্যান্ট তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একাংশের আপত্তিতে সেই প্রকল্প থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ অক্টোবর পূর্ত দফতর থেকে নোটিশ দিয়ে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীকে পূর্ত দফতরের জায়গা থেকে তাঁদের দোকান তুলে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও ওই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। ওই ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “পূর্ত দফতর থেকে আমাদের কোনও পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি।”

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

হিলি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
Share:

ত্রিমোহিনী বাজারে বেহাল নিকাশি।

নিকাশির হাল ফেরাতে ত্রিমোহিনী বাজার এলাকায় সদর রাস্তার পাশে হাইড্র্যান্ট তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একাংশের আপত্তিতে সেই প্রকল্প থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

গত ১৭ অক্টোবর পূর্ত দফতর থেকে নোটিশ দিয়ে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীকে পূর্ত দফতরের জায়গা থেকে তাঁদের দোকান তুলে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও ওই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। ওই ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “পূর্ত দফতর থেকে আমাদের কোনও পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি।”

বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের ত্রিমোহিনী বাজারটি পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর এলাকার মধ্যে পড়ে। ইতিমধ্যে রাজ্যের পূর্ত দফতর থেকে জেলা পূর্ত দফতরকে ওই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু না হলে ওই টাকা ফেরত চলে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। যা স্বীকার করছেন খোদ পূর্তমন্ত্রীও। শঙ্করবাবু বলেন, “নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক যুগ ধরে ত্রিমোহিনী বাজার এলাকার নোংরা জল জমে এলাকার মানুষ নাকাল হচ্ছেন। বর্ষায় রাস্তায় এক হাঁটু জল জমে যায়। রাস্তাটি চওড়া করার পরে দু’ধারে হাইড্র্যান্ট তৈরির জন্য ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি উন্নয়ন না চান, তবে বরাদ্দ টাকা ওই প্রকল্প থেকে সরিয়ে অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা ছাড়া উপায় থাকবে না”।

Advertisement

ত্রিমোহিনী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অপূর্বরতন দাস বলেন, “হাইড্র্যান্ট তৈরি নিয়ে নয়, আমাদের আপত্তি পূর্ত দফতরের ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েই।” তাঁর অভিযোগ, পূর্ত দফতর রাস্তার শেষে হাইড্রান্ট তৈরি না করে দোকানের পিছনে তা তৈরি করতে চাইছে। তাতে ভবিষ্যতে পুরোপুরি দোকানগুলিকে উচ্ছেদ করার পরিস্থিতি তৈরি হবে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে ওই এলাকায় রাস্তার ধারে অন্তত ২০০ জন ছোট ব্যবসায়ী দোকান করে সংসার চালান। ফলে আমরা নকশা করে বিকল্প ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনকে প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। তাতে এখনও সাড়া মেলেনি।”

দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ব্লকের বহু পুরনো এলাকা ত্রিমোহিনী। জেলা সদর বালুরঘাট থেকে হিলির রাস্তা ও পতিরাম-হিলি ও ত্রিমোহিনী-বালুরঘাট রাস্তাএই তিনটি রাজ্য সড়ক ত্রিমোহিনীতে এসে মিলেছে। অথচ সুষ্ঠু নিকাশির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে বাসিন্দারা। রাস্তার উপর জমে থাকা নোংরা কাদা জল পেরিয়ে বাসিন্দারা বাজারহাট করা বা বাসে ওঠার মতো নিত্যদিনের কাজকর্ম করতে বাধ্য হন। মূল বাজার এলাকায় রাস্তার ধারে নর্দমা থেকেও নেই। ফলে পিএইচই-র ট্যাপের জল থেকে দোকানিদের ব্যবহৃত সমস্ত জল রাস্তার ধারে জমা হচ্ছে। আর সামান্য বৃষ্টিতে পুরো এলাকা জলে ভাসছে। স্থানীয় দোকান ব্যবসায়ী পলাশ সরকার, রাজীব বসাক, পার্থ সাহা, সঞ্জয় ঘোষেরা বলেন, “বৃষ্টির জল ওই নোংরা জলে মিশে রাস্তা উপচে আমাদেরও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অন্য সব জায়গায় রাস্তা শেষ হওয়ার পরে নর্দমা তৈরি হয়। এখানে তা হলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু দোকানের পিছনে গভীর নর্দমা তৈরি হলে কার্যত রাস্তার ধার থেকে আমাদের উঠে যেতে হবে। বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ওই কাজ করা হোক।” এলাকার তৃণমূল নেতা তথা জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু বলেন, “এলাকার সকলকে নিয়ে বসা হয়েছিল। প্রত্যেকে হাইড্র্যান্ট তৈরির পক্ষে মত দিয়েছেন। দোকানিদের অবস্থান সরজমিনে খতিয়ে দেখেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।” তিনি জানান, শীঘ্রই স্থানীয় প্রশাসন এবং পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়রদের নিয়ে কোন ব্যবসায়ীর কতটা দোকানের জমি প্রস্তাবিত হাইড্র্যান্টের মধ্যে পড়ছে, তা সরজমিনে খতিয়ে দেখা হবে।

জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অরূপ রায়ের বক্তব্য, “ত্রিমোহিনী বাজারে রাস্তার দু’ধারেই পূর্ত দফতরের জায়গায় দোকানগুলি রয়েছে। ইতিমধ্যে ত্রিমোহিনী থেকে হিলি রাজ্য সড়কটি জাতীয় সড়কে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দোকানদারদের পুরোপুরি সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। প্রথমে রাজি হয়েও এখন কেন ব্যবসায়ীরা আপত্তি তুলছেন, তা নিয়ে জেলা প্রশাসনও ধন্দে।” বালুরঘাটের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “গত মাসে বিডিও, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সে সময় কেউ আপত্তি জানাননি। বিষয়টি দেখা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement