ফরাক্কা সেতুর উপরে ১৯৭৪ সালের পরে দীর্ঘ ৪০ বছর রাস্তার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি। তার ফলে ফরাক্কা ব্যারাজের উপর রাস্তা এখন বেহাল হয়ে গিয়েছে। খানাখন্দে ভরে গিয়েছে সেতুর উপর গোটা রাস্তা। ব্যারাজের উপর দিয়ে যে ২.২৪ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, তারও বেশিরভাগ জায়গায় পিচ উঠে গিয়ে কংক্রিটের ঢালাই বের হয়ে গিয়েছে। সেই ঢালাইও নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুর পিলারের সঙ্গে সংযোগকারী গার্ডারও। গঙ্গার উপরে এই সেতু দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়বে।
রাস্তার বেহাল দশায় উদ্বিগ্ন খোদ ফরাক্কা ব্যারাজ প্রোজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার। সৌমিত্রবাবু বলেন, “দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অবহেলার কারণে ফরাক্কা সেতুর উপর রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। ১৯৭৪ সালের পর থেকে ফরাক্কা সেতুর উপর রাস্তা মেরামতের কোনও কাজ ভাল ভাবে হয়নি।” এখন সেতুর উপর দিয়ে ভারী গাড়ি গেলেই গোটা সেতু কেঁপে উঠছে। সৌমিত্রবাবু জানান, পিচ ঢালাই পুরোপুরি ভেঙে নতুন করে সেতুর উপর রাস্তা করতে হবে। নইলে রাস্তার যা শোচনীয় অবস্থা, তাতে যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফরাক্কা সেতুর উপর রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করলেও সৌমিত্রবাবু স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাস্তার হাল খারাপ হলেও ব্যারাজের অবস্থা ভালো আছে। চিন্তার কারণ নেই।
ফরাক্কা ব্যারাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেহাল সেতুর সওয়া দুই কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে বানাতে ফরাক্কা ব্যারাজ প্রোজেক্টের পক্ষ থেকে তিন মাস আগে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার জানিয়েছেন, পুজোর পরে ১৫ অক্টোবর থেকে সেতুর উপর দিয়ে নতুন রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে রাস্তার একদিক ভেঙে ধাপে ধাপে সংস্কারের কাজ করা হবে। রাস্তার কাজ শেষ করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে।
সেতুর উপর রাস্তার হাল খারাপ হওয়ায় ফরাক্কা ব্যারাজ প্রোজেক্ট জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে সেতুর উপর দিয়ে চার লেনের জাতীয় সড়ক করতে আপত্তি জানিয়েছে। সৌমিত্রবাবু জানান, ফরাক্কা সেতু যখন তৈরি হয়েছিল তখন এই সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের ট্রাক যাতায়াত করত। এখন ১০ টনের জায়গায় ৬০, ৭০ টন ও তার চেয়েও ভারি ট্রাক যাতায়াত করছে। ফলে সেতু উপর চাপ বেড়েছে। তিনি বলেন, সেই কারণে ফরাক্কা সেতুর উপর দিয়ে জাতীয় সড়কের চার লেন করার অনুমতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, তারা যেন বর্তমানে ফরাক্কা সেতুর ৫০০ মিটার দূর দিয়ে নতুন সেতু তৈরি করে চার লেনের রাস্তা তৈরি করে।