ফুটপাথ বেদখল, পথ চলা গাড়ির ফাঁকে

চার দশক আগেও মালদহ শহরের রাস্তাঘাটে নিয়ম মেনে চলাফেরা করতে দেখা যেত। রাস্তার দু’ধার যথেচ্ছ দখল করে গুমটি, দোকান, স্টল তৈরি করে বসার প্রবণতা ছিল কম। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যেত। প্রবীণরা অনেকেই জানান, প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী নিজেও রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে নজর দিতেন। শহরের প্রভাবশালী নেতা-কর্তারা যদি নিয়মিত নজরদারি করেন, তা হলে ফুটপাত দখল, রাস্তায় যত্রতত্র যানবাহন রাখার আগে দশ বার ভাবা ছাড়া সে সময়ে উপায় ছিল না। অন্তত, শহরের বয়োবৃদ্ধদের অনেকের মত এমনই।

Advertisement

অভিজিত্‌ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share:

ফুটপাথ দখল করেই দোকানের সারি। এই দৃশ্য দেখা যায় বেশিরভাগ রাস্তাতেই। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

চার দশক আগেও মালদহ শহরের রাস্তাঘাটে নিয়ম মেনে চলাফেরা করতে দেখা যেত। রাস্তার দু’ধার যথেচ্ছ দখল করে গুমটি, দোকান, স্টল তৈরি করে বসার প্রবণতা ছিল কম। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যেত। প্রবীণরা অনেকেই জানান, প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী নিজেও রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে নজর দিতেন। শহরের প্রভাবশালী নেতা-কর্তারা যদি নিয়মিত নজরদারি করেন, তা হলে ফুটপাত দখল, রাস্তায় যত্রতত্র যানবাহন রাখার আগে দশ বার ভাবা ছাড়া সে সময়ে উপায় ছিল না। অন্তত, শহরের বয়োবৃদ্ধদের অনেকের মত এমনই।

Advertisement

কিন্তু এখন শহরের চেহারা বদলে গিয়েছে। এতটাই পাল্টেছে যে, মাঝে মধ্যে সেই প্রবীণদের মনে হয়, শহরটা চলছে কী ভাবে? কারণ, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা, মালদহের ইংরেজবাজার শহরের প্রায় সব ফুটপাথ দখল হয়ে থাকে। এমনকী, জাতীয় সড়কের দু’ধারের জায়গাও অনেকটা দখল হয়েছে। সেখানে সারি সারি গুমটি, দোকানপাট, গাড়ির স্ট্যান্ড। তাই পথচারীদের যেতে গেলে যানবাহনের মধ্যে নেমে যেতে হচ্ছে।

কোথাও আবার বেসরকারি বাসের টিকিট কাউন্টারও খোলা হয়েছে ফুটপাতের উপর। শুধু ফুটপাত দখল করে থেমে থাকেনি জবরদখলকারীরা। এখন রাস্তার উপরে চেয়ার-টেবিল পেতে বহু খাবারের দোকান চলছে বহাল তবিয়তে। খাবার ও পণ্য কেনার জন্য রাস্তার উপরেই গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। ফলে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হচ্ছে শহরের মূল রাস্তাগুলি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও একই ছবি দেখা যায়। অভিযোগ, পুরসভা ও প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেরই কোনও নজর নেই। তাদের নজরদারির অভাবেই শহরে ফুটপাথ নেই বললেই চলে। ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী মহলের একাংশ পুর প্রশাসনের ভুমিকায় ক্ষুব্ধ।

Advertisement

শহরের অতুল মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় ফুটপাথের উপর উলের পসড়া সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সঙ্গে রয়েছে ফলের দোকান ও বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকানও। রাস্তার উপরেই লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকছে রিকশা, অটো রিকশা এবং টোটো। সাড়ে পাঁচ মিটারের রাস্তা সাড়ে তিন মিটার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ।

এই এলাকার মতো শহরের গৌড় রোড, মকদমপুর রোড প্রভৃতি এলাকায় একই চিত্র। মকদমপুর রোডের রাস্তার দুই ধারে বাজার বসে। গৌড় রোডে রাস্তার উপরে বিকেলে বাজার বসে। রাজমহল রোড, নেতাজি মোড়, ফোয়ারা মোড়, স্টেশন রোড, মনস্কামনা রোড এলাকায় একই ছবি। জাতীয় সড়কের কিছু জায়গাতেও দু’ধারের দু’টি লেনই দখল নিয়েছে ব্যবসায়ী ও যানচালকেরা।

শহরের বাসিন্দা অপু ঘোষ বলেন, “ফুটপাতের উপরে শুধু অস্থায়ী ভাবে দোকান হয়েছে। পাকা দোকানঘরও দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি বাসের টিকিট কাউন্টার হয়েছে।” অশোক চক্রবতী বলেন, “বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দোকানের পণ্য ফুটপাতের উপর সাজিয়ে রাখেন। ফলে আমরা ফুটপাথে হাঁটার অভ্যেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।” স্বপন মাহাতো বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার উপর দিয়েই হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শহরের মধ্যে আখছাড় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। তবুও টনক নড়ছে না পুরসভা ও প্রশাসনের কর্তাদের।”

এদিকে ফুটপাথ দখল করে থাকা ব্যবসায়ী গোপাল সাহা, ফুলকুমারী মন্ডলেরা বলেন,“আমরা এক দশক ধরে ফুটপাথের উপরে ব্যবসা করছি। ফুটপাথের উপরে ব্যবসা করা ঠিক নয় জানি। পেটের দায়ে করতে হচ্ছে। প্রশাসন পাকাপাকি ব্যবস্থা করে দিলে আমরা এই ভাবে ব্যবসা করব না।”

মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “ফুটপাথের উপরে ব্যবসা করাকে আমরা সমর্থন করি না। ফুটপাথ দখল মুক্ত করতে পুরসভা ও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যবসায়ী সমিতি সহযোগিতা করবে। তবে ফুটপাথ-ব্যবসায়ীদের স্থায়ী ব্যবস্থা করে তবেই কোনও পদক্ষেপ করা উচিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement