সরকারি বাস ধরার জন্য ভিড় রায়গঞ্জে। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
রাজ্যের আটটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা পরিবহণ ধর্মঘটের জেরে শুক্রবার দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হল নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দাদের। কোচবিহার থেকে বালুরঘাট, শিলিগুড়ি থেকে মালদহ-সর্বত্র সকাল থেকে রাত অবধি একই ছবি দেখা গিয়েছে। কোথাও রাস্তার স্ট্যান্ডে সরকারি বাসের অপেক্ষা। কোথাও একটি বাসে গাদাগাদি করে যাতায়াত আবার কোথাওবা একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে বাসিন্দাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। বিশেষ করে অফিস যাত্রী এবং স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা বেশি সমস্যায় পড়েন।
শিলিগুড়ি শহরে কাজে এসে নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, বিধাননগর এলাকার সাধারণ মানুষ গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককেই বাধ্য হয়ে স্কুল-কলেজ-অফিস কামাই করতে হয়েছে বলে অভিযোগ। এনজেপি স্টেশন এবং বাগডোগরা বিমানবন্দরে এনবিএসটিসি অবশ্য অতিরিক্ত বাস পাঠায়। তা তাও পর্যাপ্ত ছিল না।
সিটুর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, “রাজ্য সরকারের নীতিতে সাধারণ শ্রমিকরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে আমরা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।” যদিও রাস্তায় যানবাহন বেশিরভাগই চলেছে বলে দাবি করেছেন দার্জিলিং জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে সমস্ত রুটে অতিরিক্ত বাস ও গাড়ি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়েছে।”
জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ির প্রতিটি স্ট্যান্ডে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেশি ভাড়া গুনে অফিসে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। অটোতে বাদুর ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের। বেসরকারি পরিবহণ কর্মীদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির পক্ষে চিত্ত দে দাবি করেন, “বেসরকারি পরিবহণ কর্মীদের ধর্মঘট সফল হয়েছে। পরিবহণ সঙ্গে জড়িত স্বার্থেই আমাদের ধমর্ঘট ডাকতে হয়।” ধর্মঘটে দিনভর নাকাল হন ডুয়ার্সবাসী। ছোটগাড়ি আর কিছু সরকারি বাস রাস্তায় থাকলেও তাতেও সমস্যা মেটেনি। মালবাজার, চালসা, ওদলাবাড়ি সর্বত্রই জাতীয় সড়কে গাড়ির অপেক্ষায় ভিড় করে থাকতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের। সন্ধ্যায় মালবাজার থেকে জলপাইগুড়িগামী শেষ সরকারি বাস বাসস্ট্যান্ড থেকে বার হতেই বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন জলপাইগুড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মালবাজারে কাজ করতে আসা সরকারি কর্মীরাও। যাত্রীরাই বাস ঠেলে ইঞ্জিন চালু করেন। বাস না থাকার সুযোগে মালবাজার-শিলিগুড়িগামী রুটে বেশকিছু ছোটগাড়ি দ্বিগুন ভাড়া আদায় করে দিনভর যাতায়াত করে বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। এদিন রায়গঞ্জ থেকে জেলার বিভিন্ন রুট সহ মালদহ, বালুরঘাট ও শিলিগুড়ি রুটে অধিকাংশ বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ ছিল! এমনকী, রাস্তায় নামেনি ট্রেকারও। হাতেগোনা অটো চললেও তাতে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রায়গঞ্জ ডিপো থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে সরকারি বাস চললেও তা পর্যাপ্ত ছিল না! বাসের অভাবে দিনভর শহরের শিলিগুড়িমোড়, সুপারমার্কেট, মোহনবাটি, পুরবাসস্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি বাসে ভিড় ছিল ভোগান্তির জন্য যথেষ্ট। অনেক যাত্রী দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে ট্যাক্সিভাড়া করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
আলিপুরদুয়ার শহরে অটো চললেও বাস চলেনি। অটোমোবাইলস ওর্য়াকাস ইউনিয়নের আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি নির্মল দাস বলেন, “পরিবহণ কর্মীদের স্বার্থেই আমাদের আন্দোলন।” আলিপুরদুয়ার তরাই অঞ্চল ম্যাক্সি ট্যাক্সি ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাঙ্কর দে বলেন, “কর্মীরা বাস না চালানোয় গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল।” মালদহ, বালুরঘাট এবং কোচবিহারের ছবিটাও এই ছিল। কোচবিহার-শিলিগুড়ি রুটের ৩৫টি বাসই বন্ধ ছিল লোকাল রুটের বেসরকারি বহু বাসও রাস্তায় নামেনি। এদিন ওই সব রুটের ট্রেনে বাড়তি ভিড় দেখা যায়। আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক তপন গুহরায় বলেন, “শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহারগামী ২০টির বাসের মধ্যে মাত্র ৫টি চলছে।”