পাহাড়ে গরম চা, সমতলে সঙ্গী লস্যি

পাহাড়ে ঠান্ডা। সমতলে গরম। অতএব প্রার্থীদের ঠান্ডা-গরম, দুইয়ের দাওয়াই রাখতে হচ্ছে। ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে পরনের পোষাক। বদলে যাচ্ছে মেনুও। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গায়ে জ্যাকেট, কোট কিংবা ভারী চাদর দেখা যাচ্ছে। দুপুরের পরে সে সব খুলে ফেলে স্রেফ হালকা পোষাক। দুপুর পর্যন্ত গরম চা-কফির দিকে নজর থাকলে বেলা গড়াতে লস্যি, ঠান্ডা সরবতের উপরে জোর দেওয়া ছাড়া উপায় কি?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

দার্জিলিঙে লিফলেট বিলি করে প্রচার সিপিএম কর্মীদের। পরনে সোয়েটার। সমতলে অবশ্য অন্য চিত্র।

পাহাড়ে ঠান্ডা। সমতলে গরম। অতএব প্রার্থীদের ঠান্ডা-গরম, দুইয়ের দাওয়াই রাখতে হচ্ছে। ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে পরনের পোষাক। বদলে যাচ্ছে মেনুও। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গায়ে জ্যাকেট, কোট কিংবা ভারী চাদর দেখা যাচ্ছে। দুপুরের পরে সে সব খুলে ফেলে স্রেফ হালকা পোষাক। দুপুর পর্যন্ত গরম চা-কফির দিকে নজর থাকলে বেলা গড়াতে লস্যি, ঠান্ডা সরবতের উপরে জোর দেওয়া ছাড়া উপায় কি? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, এমনই পরস্পরবিরোধী ছবি দেখা যাচ্ছে দার্জিলিং কেন্দ্রের ভোটের প্রচারে।

Advertisement

এমনটাই হওয়ারও কথা। কারণ, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় যেমন রয়েছে পাহাড়ের ৩ মহকুমা তেমনই রয়েছে সমতল শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া বিধানসভা। এখন পাহাড়ের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। সমতলে সেই তাপমাত্রার পারদ কম করেও ৩৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘুরছে।

শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনায় বিজেপি-মোর্চার যৌথ সভায় এক
সমর্থক রোদ থেকে বাঁচতে মুখ ঢেকেছেন কাপড়ে, চোখে রোদচশমা।

Advertisement

তাই ভাইচুং ভুটিয়া, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সুজয় ঘটক, সমন পাঠক ও তাঁদের হয়ে প্রচারে নামা নেতা-কর্তাদের গাড়িতে দু-ধরনের পোশাকই থাকছে। ব্যবস্থা থাকছে ঠান্ডা-গরম দুই সামলানোর দাওয়াই। যেমন সাদা কুর্তার উপরে একটি ভারী চাদর চাপিয়ে গাড়িতে উঠেছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী অহলুওয়ালিয়া। দার্জিলিঙের হার্মিটেজ এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে গন্তব্য শিলিগুড়ি। পাহাড়ে কয়েকদিন টানা প্রচার চালানোর পরে সমতলে থেকে এ বার প্রচার চালাবেন তিনি। শিলিগুড়ি পৌঁছেই গায়ের চাদর খুলে ফেললেন। গাড়ির জানালার কাচ উঠে চালু হল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকেও কোট বা সোয়েটার ছাড়া দার্জিলিঙে দেখা যায়নি। শুক্রবার সকালেও পাহাড়ে ছিলেন তিনি। ছাই রঙের একটি কোট পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন। বিকেলে শিলিগুড়ি ফিরে অবশ্য গাড়িতেই কোটটি খুলে রাখতে হয়েছে গৌতমবাবুকে। মার্চ মাসের শেষ দিন বিকেলে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের পার্টি অফিসে ঢুকেই দলের কর্মীদের সিলিং ফ্যানের ‘স্পিড’ বাড়িয়ে দিতে বলেছেন। শুক্রবার শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রির কিছু বেশি, সেখানে দার্জিলিঙের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির আশেপাশে। সমতলে প্রার্থীরা গরমে হাঁসফাস করলেও, দার্জিলিঙে ‘কুল-কুল’ বাতাসে প্রচার করেছেন সকলে।

শিলিগুড়ি শহরে বিজেপির রোড শো-র সময়ে
প্রচারের ফাঁকে গলা ভেজাচ্ছেন এক কর্মী।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্চের শেষ দিনে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এবং কোচবিহারে যে তাপমাত্রা ছিল, তা স্বাভাবিকের থেকে বেশিই। কোচবিহারের তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৪ ডিগ্রি বেশি। সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরবঙ্গে যে তাপমাত্রা থাকে, এ বছর মার্চের মাসের শেষ দিকেই পারদ সেই তাপমাত্রা ছুঁয়ে ফেলায়, প্রচারে বেরিয়ে হাঁফিয়ে উঠছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে নেতা কর্মীরা। আখের রস বা ডাবের দোকানে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের তো বটেই, প্রার্থীদেরও দেখা মিলছে। প্রচার নয়, চিন্তা আছে ভোটের দিন নিয়েও।

আগামী ১৭ এপ্রিল ভোট গ্রহণ হবে— দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড থেকে জানা গেল, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি। আর গত বছরের ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি।

শুধু উত্তরবঙ্গের সমতল নয়, সিকিমের তাপমাত্রাও ঊর্ধ্বগামী। সোমবার সিকিমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। যদিও আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া যে কোনও ঘুর্ণাবর্ত এই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “এই সময়টা সাধারণত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তবে প্রতি বছরই দেখা যায় কোনও একটি নিম্নচাপ বা ঘুর্ণাবর্তের টানে জলীয় বাস্প এসে বৃষ্টি দেয়। তাপমাত্রাও কমে যায়। এ বারে তেমন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি না হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে।”

দার্জিলিং কেন্দ্রে পাহাড়ের তিন মহকুমার সঙ্গে শিলিগুড়ি মহকুমাও রয়েছে। সমতলের গরম আর পাহাড়ে ঠান্ডা, দুই বিপরীত আবহাওয়ার মোকাবিলায় করতে হচ্ছে প্রার্থী ও দলের কমর্ীর্দেরও। মন্ত্রী গৌতমবাবুর কথায়, “পাহাড়ের আবহাওয়া খুব আরামদায়ক। কিন্তু সমতলে বড্ড গরম। এক দিন পাহাড়ে থেকে পরদিন সমতলে ফিরে যেতে হচ্ছে, ঘনঘন দুই রকম আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হচ্ছে।” দার্জিলিঙের সিপিএম প্রার্থী সমন পাঠকের কথায়, “সমতলে গরমের জন্য প্রচার চালাতে খানিকটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কার্শিয়াং-এর পথ ধরলেই আবহাওয়া বদলাতে শুরু করে। দুই পরিবেশেই খাপ খাওয়াতে হচ্ছে।”

মঙ্গলবার রবিন রাই ও বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement