পুলিশের নজরদারিতে নিজের জমির ধান কেটে ঘরে তুললেন বিজেপির এক সমর্থক। রবিবার কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার ভানুকুমারি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মান্তানি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই বিজেপি সমর্থকের নাম তরুণ প্রধান। প্রায় ৫ বিঘা জমিতে তিনি আমন ধানের চাষ করেন। অভিযোগ, সম্প্রতি তৃণমূল আশ্রিত একদল দুষ্কৃতী ওই ব্যাক্তিকে জমির ধান না কাটার ফতোয়া দেয়। ফলে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও শ্রমিক পাচ্ছিলেন না তরুণবাবু। তার জেরে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি তুফানগঞ্জ মহকুমাশাসকের দফতরে লিখিত নালিশ জানান তিনি। শেষপর্যন্ত এ দিন তিন পুলিশকর্মীর নজরদারিতে প্রায় এক বিঘা জমির ধান কেটেছেন তিনি। বেলা এগারোটা নাগাদ ধান কাটা শুরু হতেই দু’টি মোটরবাইকে তিনজন পুলিশকর্মী এলাকা চক্কর দিতে শুরু করেন। দীর্ঘক্ষণ ওই পুলিশকর্মীরা জমির অদূরে পাকা রাস্তার ওপর মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে নজরদারি চালান। গোটা ঘটনায় কোচবিহারের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি, প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ জানানোয় চাপে পড়ে পুলিশ নিরাপত্তার ওই বন্দোবস্ত করেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব অবশ্য বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সবক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই হয়েছে।”
বিজেপির অভিযোগ, কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বক্সিরহাট থানা এলাকায় বিজেপির সাংগঠনিক ভিত কিছুটা শক্ত। কয়েক বছর ওই গ্রাম পঞ্চায়েত তো বটেই, সেখানকার তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতিও বিজেপির দখলে ছিল। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার গঠনের পর ফের ওই এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বিজেপি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্যই দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি রীতিমতো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তৃণমূল আশ্রিতেরা। তরুণবাবুর অভিযোগ, গত ১৮ অক্টোবর তাঁর বাড়িতে ঢুকে খুনের হুমকি ও সামাজিক বয়কটের হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল সমর্থকেরা। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় শ্রমিকরা কেউই ধান কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না। ফলে পুরো জমির পাকা ধান জমিতে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। এ দিন ধান কাটার তদারকির ফাঁকে তরুণবাবু বলেন, “বরাবর বিজেপির সমর্থক বলে আমাকে সবাই চেনেন। তাই তৃণমূলের রোষের মুখে পড়েছি। বেশ কিছু ধান নষ্ট হয়েছে। এ দিন তিন পুলিশকর্মী মোটরবাইকে টহলদারি করে নজর রাখায় প্রায় এক বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।” তিনি জানান, স্থানীয় শ্রমিকেরা অবশ্য তাঁর জমির ফসল কাটতে রাজি হননি। বক্সিরহাট থেকে কয়েকজন শ্রমিক ও দলের কয়েকজনের সাহায্যে এটা সম্ভব হয়। বিজেপির আরও অভিযোগ, ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বীরমাল্য দাস, নেপাল মণ্ডল, রতন সরকারের মত অন্তত ১০ জন কর্মী-সমর্থককেও একই ভাবে জমির ধান কাটতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “বিজেপির সাংগঠনিক ভিত মজবুত বলেই ওই এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে তৃণমূল।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এলাকা অশান্ত করতে বিজেপি তাদের লোকদের দিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে উস্কানি দিচ্ছে। সত্যিই তেমন কিছু হলে ২-৩ জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে গিয়ে কখনো ধান কাটাতে পারতেন না বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব।”