প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
দু’জন বিপরীত মতের রাজনৈতিক। অন্যের সঙ্গে নিজের পার্থক্য প্রকাশ্যে তুলে ধরতে তত্পর দু’জনেই। যদিও, পুরভোট নিয়ে দলের মধ্যে একই অভিযোগের নিশানায় দাঁড়িয়ে গিয়েছেন দু’জনে।
দলের তরফে সরকারি ভাবে প্রার্থী তালিকা সরকারি ভাবে ঘোষণা হওয়ার আগেই নিজে প্রার্থী হিসেবে ভোট চাইতে পথে নেমে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। গত বুধবার শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দাদের কাছে নিজের জন্য ভোট চেয়েছেন মন্ত্রী। এর ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই ময়দানে নেমে পড়লেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে নিজের ভোট প্রচার সারলেন অশোকবাবুও। অশোকবাবু প্রার্থী হচ্ছেন বলে দল ঘোষণা করলেও, কোন ওয়ার্ডে তিনি দাঁড়াবেন তা ঘোষণা হয়নি। বামেদের তালিকা প্রকাশের দিনই তা জানা যাবে বলে দলের তরফে জানানো হয়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়েন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই দল তাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে, বাসিন্দাদের ভোট দেওয়ার আর্জিও জানালেন।
রাজ্য সম্মেলন শেষের দেড় দিন আগেই কলকাতা ছেড়ে এসে, বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পার্টি অফিস থেকে ওয়ার্ডে প্রচারে বের হন তিনি। সঙ্গে দলের পতাকা নিয়ে কর্মী সমর্থকরা। শেষবার পুরভোটে লড়েছিলেন ১৯৮৮ সালে। এবারে ফের পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে শেষ পুর ভোটের প্রচার সঙ্গীর দেখা পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন টানা দু’দশক মন্ত্রী থাকা অশোকবাবু। গুলাব চন্দ্র প্রসাদের অলঙ্কারের দোকানে ঢুকে তাঁকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরেন তিনি। কর্মী সমথর্র্কদের ডেকে বলেন, “সেই ১৯৮৫ সাল থেকে একসঙ্গে দল করছি। সে সময়ে একসঙ্গে পুরভোটও করেছি।” এরপরে পুরোনো সঙ্গীকে অশোকবাবু বলেন, “এবারে তোমার ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছি, আবার এক সঙ্গে লড়তে হবে।”
তৃণমূল এবং সিপিএম শিলিগুড়ই পুরভোটে যুযুধান দু’দলেরই নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ‘নেতা’ প্রকাশ্যে প্রচারে নেমে পড়লেও, অনান্য ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকার অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে। প্রার্থীরা বসে থাকায়, এলাকার কর্মীদেরও মধ্যেওস দেওয়ালে শুধুমাত্র দলের প্রতীক আঁকা ছাড়া অন্য কাজ নেই বলে হতাশা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল-সিপিএমের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলেরই অন্দরেই।
দলের ‘লাইন’ অনুযায়ী পার্টি ঘোষণা না করা পর্যন্ত কেউ প্রার্থী হিসেবে যে প্রচার চালাতে পারেন না, তা অশোকবাবুর জানা। সে কারণেই এ দিন প্রচার শেষে তিনি বলেন, “আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণা না হলেও, দল আমাকে ভোটে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়াতে হবে। এলাকার কর্মী সমর্থকরা চাইছিল আমি একবার ঘুরে যাই। তাই সকলের সঙ্গে দেখা করে গেলাম।”
এ দিন অশোকবাবুকে ঘুরতে দেখে তাঁকে ঘিরে বাসিন্দাদের জটলা তৈরি হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন এ গিয়ে এসে প্রাক্তন মন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। ‘স্যার’ সম্বোধন করে কেউ কেউ বাড়ির ভিতরেও ডেকে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়াতে চেয়েছেন। সুর্মা, সুগন্ধি বিক্রেতা মহম্মদ সামিম দোকানের সামনে এসে অশোকবাবু হাত জোড় করতেই, সামিম বলেন, “আরে স্যার, কী করছেন। লজ্জা দেবেন না।” এ দিন ঘণ্টা দেড়েক ধরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন তিনি। হাসমি চকের উড়ালপুল লাগোয়া এলাকা থেকে অশোকবাবু হাঁটা শুরু করেন। দলের কর্মী সমর্থকদের দাবি, অশোকবাবু যখন প্রচারে বেরিয়েছিলেন তখন দলের পতাকা নিয়ে জনাকয়েক কর্মী সঙ্গে ছিলেন। প্রচার যখন শেষ হয় তখন তা মিছিল হয়ে গিয়েছিল।
অশোকবাবুর মতো একাধিক বিদায়ী কাউন্সিলরকে এবারেও প্রার্থী করা হচ্ছে বলে সিপিএমের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তেমনিই এক বিদায়ী কাউন্সিলরের কথায়, “আমাদের দলে এমন আগে হয়েছে কিনা জানি না। তবে মন্ত্রী গৌতম দেব রাস্তায় নেমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। সে কারণেই পার্টি থেকে অশোকবাবুকে হয়ত প্রকাশ্যে প্রার্থী হিসেবে প্রচারের অনুমতি দিয়েছে। তবে আমাদের তেমন ছাড় নেই।’’
এ দিকে, এ দিনও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়া, আশ্রমপাড়া, রাজা রামমোহন রায় রোড এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভোট চেয়েছেন মন্ত্রী গৌতমবাবু।