উদ্যোগ বাগডোগরা বিমানবন্দরে

পার্কিং ফি-র জট এড়াতে টাইমার

গত বছর জুলাই মাসা। সিকিমের বাসিন্দা পাশাং চামলিং বাগডোগরা থেকে কলকাতার বিমান ধরতে বন্ধুর গাড়িতে আসেন। তাঁর বন্ধু টার্মিনাল ভবনের সামনে পাশাংকে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। গেটে পার্কিং-এর কর্মীরা গাড়িটি আটকে নির্ধারিত ফি দাবি করেন। পাঁচ মিনিটের কম সময় থাকলে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) নিয়ম অনুসারে, পার্কিং ফি লাগে না, সেই কথা বলেও ছাড় পাননি পাশাং।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১১
Share:

গত বছর জুলাই মাসা। সিকিমের বাসিন্দা পাশাং চামলিং বাগডোগরা থেকে কলকাতার বিমান ধরতে বন্ধুর গাড়িতে আসেন। তাঁর বন্ধু টার্মিনাল ভবনের সামনে পাশাংকে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। গেটে পার্কিং-এর কর্মীরা গাড়িটি আটকে নির্ধারিত ফি দাবি করেন। পাঁচ মিনিটের কম সময় থাকলে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) নিয়ম অনুসারে, পার্কিং ফি লাগে না, সেই কথা বলেও ছাড় পাননি পাশাং।

Advertisement

গত নভেম্বরে দিল্লি থেকে কাজ সেরে কালিম্পঙের বাসিন্দা রনি চাঙ্গি ফেরেন বাগডোগরায়। গাড়ির চালক সময়মত না আসায় তিনি প্রায় এক ঘন্টা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েও থাকেন। গাড়ি আসা মাত্রই তিনি তাতে উঠে রওনা দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে গেটে আটকে পার্কিং ফি দাবি করা হয়। শেষে এএআই অফিসারদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বাগডোগরা বিমানবন্দরের পার্কিং ফি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ পৌঁছাচ্ছে এএআই-র অফিসারদের কাছে। বিশেষ করে, যে হাতে লেখা স্লিপটি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। পরিস্থিতি সামলাতে তাই ইলেকট্রনিক টাইমার সংবলিত পার্কিং ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অভিযোগ, গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের ঢোকার সময়ই হাতে সময় লেখা পার্কিং স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে অনেকেই লেখা সময়টা খেয়ালই করছেন না। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পরে সময় নিয়ে বচসা হচ্ছে। অনেক সময় ১-২ মিনিট বেশি লেখা হয় বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যে পর্যটন সংগঠন, শিল্পপতিদের সংগঠনের তরফে এএআই-কে পার্কিং নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ বার থেকে অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে গেটে ঢোকার সময়ে উল্লেখ করে কার্ড দেওয়া হবে। বেরোনোর সময়ে মেশিনে সময় দেখে নির্দিষ্ট পার্কিং ফি দিতে হবে। বর্তমানে চার চাকার গাড়ির জন্য প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫৫ টাকা পার্কিং ফি দিতে হয়। বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, “পার্কিং ফি নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ আসছে। হাতে লেখা স্লিপ নিয়েই সমস্যা। তাই ইলেকট্রনিক টাইমার সংবলিত পার্কিং ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।”

এআইআই সূত্রের খবর, গত নভেম্বর অবধি পার্কিং ব্যবস্থাটি দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে ছিল। টেন্ডারের সময়সীমা শেষ হওয়ায় ডিসেম্বর থেকে এএআই নিজেই পার্কিং ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব রিসেটেলমেন্ট-এর অধীনে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদের দিয়ে ওই কাজ করানো হচ্ছে। মাঝে এক দফায় দরপত্র ডাকা হলেও মাসিক দর বেশি থাকায় (৯ লক্ষ) কোনও সংস্থা আর তাতে আগ্রহ দেখাননি। মাসিক দর (৭ লক্ষের মত) কিছুটা কমিয়ে ফের নতুন করে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বর্তমানে পার্কিং থেকে বিমানবন্দরে রোজ ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়। গরম, পুজোর মরশুমে যা আরও বেড়ে যায়। রোজ কম করে ৫০০ গাড়ি বিমানবন্দরে যাতায়াত করে।

বিমানবন্দরের কয়েকজন অফিসার জানান, ২০১৩-১৪ সালের নভেম্বর অবধি যাত্রী সংখ্যা ছিল সাত লক্ষের সামান্য বেশি। কর্তাদের অনুমান, ২০১৫ সালের মার্চে যাত্রী সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়াবে। তখন বাগডোগরা গুয়াহাটি, ভুবনেশ্বর, পাটনা বা রাঁচি বিমানবন্দরের সমান জায়গায় এসে দাঁড়াবে। সেখানে পার্কিং ফি নিয়ে অভিযোগ আসতে থাকলে দেশ বিদেশের পর্যটক, যাত্রীদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে।

ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি।” বণিকসভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) নর্থবেঙ্গল-সিকিম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান প্রবীর শীল বলেন, “পার্কিং ফি নিয়ে আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। এটা বন্ধ করা দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement