বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের পথেই যেন হাঁটল সিপিআই।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে দলের দুই দিনের দার্জিলিং জেলা সম্মেলনের শেষে নতুন জেলা কমিটিও গঠন হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গতবারের কমিটির সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষই এবারেও একই পদে থেকে গেলেন। জলের অন্দরের খবর, কারও নাম এখনও ঘোষণা করা না হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন মুখ এখনও কেউ নেই। পুরানোদেরই অদলবদল করে রাখা হয়েছে জেলা কমিটিতে। অনেকটা যেন জেলা সিপিএমের মতই। ফলে, দলের নেতাদের অনেকেরই একান্তে আক্ষেপ করে জানান, হাতেগোনা কয়েকটি মুখের বাইরে নতুন মুখ বা প্রজন্মকে ‘বড়’ দায়িত্বে আনতে না পারার ‘ধারা’ অব্যাহত থাকল এ জেলাতেও।
এদিন সিপিআই-এর সম্মেলনের শেষে দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার জেলা সম্পাদক পদে উজ্জ্বল চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ পদে কুমারেশ ঘোষ চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। ৩৭ জন পূর্ণ সদস্য এবং ৬ জনকে আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। বাকি পদের দায়িত্ব ফেব্রুয়ারিতে দলের রাজ্য সম্মেলনের পর ঘোষণা করা হবে।
একইভাবে গত ডিসেম্বরের নকশালবাড়িতে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের পর দেখা যায়, কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারকেই জেলার সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। নতুন করে কোনও বড়মাপের রদবদল করা হয়নি। তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মুন্সি নুরুল ইসলাম, মুকুল সেনগুপ্তের মতো অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের আরও গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে কেন দল ভাবছে না তা নিয়ে দলের মধ্যেই আলোচনা হয়েছে।
যদিও বাম নেতারা বিষয়টিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সিপিআই-র নব নির্বাচিত জেলা সম্পাদক উজ্জ্বলবাবু বলেন, “কমিউনিস্ট দলে নেতৃত্ব বা দায়িত্বে আসাটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মেলবন্ধনকে বেশি জোর দিয়ে থাকি। এবার তাই হয়েছে। টানা আন্দোলন এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নতুন মুখের নেতারা আগামী দিনে সামনে আসবেন।” তিনি জানান, তরুণ প্রজন্মকে সামনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। এবার অন্তত ১০ জন প্রবীণ নেতাকে সরিয়ে ৮ জন তরুণ নেতৃত্বকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। চাকরি, সংস্থা থেকে শুরু সর্বত্র পর্যায়ক্রমে তাই হয়ে থাকে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশবাবু বলেন, “সিপিআই নেতাদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে ওঁদের কাদের আনবেন, কাদের রাখবেন না তা সম্পূর্ণ ওই দলের বিষয়। আমাদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমরা এবারের সম্মেলন থেকে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনার উপর জোর দিয়েছি।” তিনি জানান, গতবারের সম্মেলনের আগে আমাদের জেলা কমিটির গড় বয়স ছিল ৬৪ বছর। এটা এবারে ১৪ বছর গড় কমেছে। আগামীতে এই গড় বয়সটা আরও কমানো হবে।
তবে ফ্রন্টের বহু নেতাই জানিয়েছেন, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর সিপিএম তো বটেই সিপিআই দলেও জেলায় নতুন প্রজন্মের যোগ দেওয়ার ঘটনা কার্যত নেই। সিপিএম কোনওক্রমে কৃষক, ছাত্র, যুব, মহিলা ফ্রন্ট বাঁচিয়ে রাখলেও সিপিআই গড় সংগঠনগুলির অবস্থা আরও খারাপ। সিপিআই-র জেলায় ছাত্র ও যুব সংগঠনই নেই। মহিলা সংগঠন নিষ্ক্রিয়। শিক্ষক ফ্রন্ট নেই। কৃষক ফ্রন্ট নামেই রয়েছে।
একমাত্র নির্মাণ শ্রমিকদের ভিত্তি করে শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। দলের জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনে তা জানিয়েই দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকার বিষয়ও যোগ হয়েছে। তাই দলের নতুন প্রজন্ম নেই। পুরানোদের তাই অদলবদল সামনে রাখা হচ্ছে। আবার ১-২ জন নেতা সামনে সারিতে থাকলেও তাঁরা বিভিন্ন গণ সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। প্রবীণ কয়েকজন দলও ছেঁড়ে শাসক দলে নাম লিখিয়েছেন। তাই সিপিআইকে ভরসা রয়েছে পুরানোদের উপরই।