ফাঁসিদেওয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ফাঁসিদেওয়া এখনও পুরোপুরি শহর হয়ে ওঠেনি বলে মনে করেন সেখানকার বাসিন্দারাই। বিশেষত, অনেক বাড়িতেই এখনও গবাদি পশু রাখা হয়। সীমান্ত কাছে হওয়ায় রাতের ঘুম উবে যায় অনেকেরই। কারণ, ঝড় বৃষ্টির কিংবা ঘন কুয়াশা হলে সীমান্ত পারের চোরেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাইরে থেকে দরজা ‘বন্ধ’ করে গবাদি পশু নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
কয়েক দশক আগে থেকেই দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়ায় গরু-পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য চলছে। এ পারের একাংশ দুষ্কৃতী সমস্ত খোঁজখবর ওপারে চালান করে ঘটনাগুলি ঘটায়। বন্দরগছ বা ফাঁসিদেওয়ার একসময় গর্ব মহানন্দা নদীর মধ্যে দিয়ে গরু নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
ফাঁসিদেওয়ায় একেবারে লালদাস জোত থেকে মুড়িখাওয়া অবধি প্রায় ২০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ধনিয়ামোড় থেকে বন্দরগছ অবধি ২ কিলোমিটারের একটু বেশি এলাকা মহানন্দা নদীর জন্য উন্মুক্ত। সারা বছর তো বটেই, বর্ষায় মজে যাওয়া মহানন্দায় আজকাল আগের মত খুব একটা জলও ওঠে না। আর শীতের রাত তো রয়েছেই। সেই সুযোগেই পাচারের ঘটনাগুলি ঘটে বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। একাধিক ঘটনায় ধরা পড়েছে সীমান্ত টপকে আসা সন্দেহভাজনেরাও। পুলিশের খাতায়, এপ্রিল-মে মাসের পর ঘটনা না ঘটলেও পুলিশে নথিভুক্ত না হওয়া ছুটছাট ঘটনা ঘটেই চলে। এমনকি, ফাঁসিদেওয়ার প্রসিদ্ধ শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরে চুরির ঘটনাও ঘটেছে। পরে মন্দিরের দেবীর ভাঙা অংশ নদীরে মাঝের চর থেকে উদ্ধার হওয়ায় বাসিন্দাদের বা পুলিশের কাছে বোঝার উপায় থাকে না, মালপত্র আসলে যাচ্ছে কোথায়!
কিছুদিন আগে অবশ্য বিএসএফ, প্রশাসন ও পুলিশ কিছুটা নড়েচড়েও বসে। নতুন পরিকল্পনায় খোলা সীমান্তে নজরদারি শুরু হয়েছে। সীমান্তের স্পিডবোট, একাধিক শেল্টার টাওয়ার, নাইট ভিশন ক্যামেরাও নামিয়েছে বিএসএফ। পুলিশ গ্রামগুলির বাসিন্দাদের তথ্য রাখা ছাড়াও সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি এলাকা ধরে ধরে নামাচ্ছে সশস্ত্র অফিসার, কনস্টেবল ও সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের দলও। দার্জিলিং জেলা পুলিশ একজন ডিএসপি (সীমান্ত) পদমর্যাদার অফিসারকে ফাঁসিদেওয়াতেই নজরদারির জন্য রেখেছেন।
তবে এখন নিশ্চিত থাকলেও এবারের শীতে কী হবে সেই চিন্তা মাথা ছাড়া হয়নি বাসিন্দাদের। বিএসএফের নর্থবেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি সঞ্জীবকৃষ্ণ সুধ বলে দিয়েছেন, “আমরা সীমান্তে কড়া নজরদারি করছি। নদী সীমান্তে নানা পদ্ধতিতে নেওয়া হচ্ছে।” বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র বলেছেন, “আগামী মাসের শুরুতেই পুলিশ, বিএসএফ সবাইকে নিয়ে বৈঠক হবে। আমরা খোলা সীমান্ত নিজেদের মত ‘আটকে’ রাখতে বদ্ধপরিকর।”
শুধুই কী সীমান্ত, সরকারি জমি দখলের ঘটনাও চলছে ফাঁসিদেওয়ায়। তাতেও উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় লোকজনকের একাংশের রাস্তা, সরকারি জমি দখল করে দোকান বা ঘর তো করছেনই। কিন্তু অনেক সময় ‘ওপারের বাইরে’ লোক এনে দখলি জমিতে বসানোর চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। এলাকার বড় হওয়ার তাগিদে কমছে সবুজ জমি। আর সেখানে জমির কারবীরারা আস্তে আস্তে সক্রিয় হচ্ছে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল এলাকা, ফাঁসিদেয়ার সদর, কামারগছ, জালাসের মত এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ঐতিহ্যশালী ফাঁসিদেওয়া হাটের প্রায় ৩০ একর জমি অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। শেষে বহু জায়গার জমি প্রশাসন দখল করে সাইনবোর্ড ঝোলাতেও বাধ্য হয়েছে।
জমির চাহিদা থাকলেও বেহাল ফুলবাড়ি বাইপাস। অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত নয়। অথচ সীমান্তের ফুলবাড়ি বাণিজ্য পথ এখন খোলার অপেক্ষায়। তেমনই সার্ক রোডের কাজও এগোচ্ছে।
(চলবে)