পাউরুটি-ঘুগনির দোকানে নিয়মিত খেতে আসা এক ক্রেতার সাহায্যে মাসির বাড়ি থেকে উদ্ধার হল এক নাবালিকা। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করার পরে, তার মাসিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, নাবালিকাকে জোর করে আটকে রেখে বিক্রির চেষ্টা করে তার মাসি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুরের ঘটনায় ধৃতের নাম মোমেদা খাতুন। পুলিশ জানায়, সে কোচবিহারের চটেরহাটের বাসিন্দা। নিজের নাম ভাঁড়িয়ে স্বামীকে নিয়ে মোমেদা পাহাড়পুর এলাকায় থাকত বলে জানা গিয়েছে। মোমেদার স্বামী তথা নাবালিকার মেসো পলাতক। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “পলাতকের খোঁজ চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে ওই নাবালিকাকে পাহাড়পুরের একটি বাড়িতে আটকে রেখেছিল ধৃত মোমেদা। এখানেই তার একটি ঘুগনি-পাউরুটির দোকান রয়েছে। সেখানেও ওই নাবালিকাকে দিয়ে কাজ করানো হতো বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দোকান থেকে নিয়মিত পাউরুটি কিনতেন এলাকার এক বাসিন্দা। গত সোমবার সুযোগ পেয়ে ওই ব্যক্তিকে নিজের দুর্দশার কথা জানায় ওই নাবালিকা। তাঁকে আটকে রাখা এবং রাতের বেলায় জোর করে মদ খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ করে সে। এরপরেই ওই ব্যক্তি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বিষয়টি জানায়। এরপরেই অভিযান চালায় পুলিশ। নাবালিকাকে শহরের রেসকোর্সপাড়ার অনুভব হোমে রাখা হয়েছে। হোমের তরফে জানানো হয়েছে, তার কাউন্সেলিং চলছে।
হোম এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ বছরের ওই নাবালিকা শিলিগুড়ির বাসিন্দা। তার জন্মের পরেই মায়ের মৃত্যু হয়। ৪ বছর বয়সে নাবালিকার বাবা নিখোঁজ হয়ে যান। তারপরে কোচবিহারের চটেরহাটে দিদিমার বাড়িতে থাকতে শুরু করে সে। অভিযোগ, বছরখানেক আগে মাসি মোমেদাই নাবালিকাকে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই ব্যক্তির খপ্পর থেকে মাসখানেক পালিয়ে আসে বলে তার দাবি। শিলিগুড়ি লাগোয়া একটি এলাকায় বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে ওই নাবালিকা। খবর পেয়ে নাবালিকার মাসি এক যুবকের মাধ্যমে তাকে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে নিয়ে আসে বলে অভিযোগ। নাবালিকার অভিযোগ তার মাসি এবং মেসো দু’জনে প্রতি রাতে তাকে জোর করে মদ খেতে বাধ্য করত। দেহব্যবসা করতেও চাপ দেওয়া হতো বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকাকে ফের বিক্রি করে দেওয়ার মতলব করা হয়। অনুভব হোমের কো-অর্ডিনেটর দীপশ্রী রায় বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন সকলের চেষ্টায় ওকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।”