একের পর ঘটনায় জেলায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। দল থেকে বহিষ্কারেও সেই অস্বস্তি কাটেনি। দলেরই একাংশের দাবি মেনে এ বার তাই কর্মী-সমর্থকদের উপরে রাশ শক্ত করতে উদ্যোগী হলেন মালদহের তৃণমূল নেতৃত্ব।
মালদহে সরকারি আধিকারিকদের নিগ্রহের ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের একাংশের নাম পর পর জড়িয়ে যাওয়ায় দলের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। জেলা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরে। আন্দোলনের নামে সরকারি অফিসে হামলা, নিগ্রহের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই ব্যাপারে জেলা নেতৃত্বকে পদক্ষেপ করার অনুরোধও জানিয়েছেন জেলা নানা প্রান্তের দলীয় কর্মীরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, সে কথা মাথায় রেখে আন্দোলনের নামে যথেচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণার প্রবণতা বন্ধ করাতে আসরে নামেন মালদহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমাদের জেলার সমস্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্মারকলিপি থেকে শুরু করে মিছিল করতে হলে নেতা-কর্মীদের আমাদের কাছে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
গত সপ্তাহে প্রথমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিত্ দাসের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকেরা পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়িতে জাতীয় সড়কের সদর দফতরের প্রকল্প আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ দেখানোর পরে চাপ দিয়ে জেলা প্রকল্প আধিকারিক সন্দীপকুমার শর্মাকে রাস্তায় হাঁটানো হয়। ওই দিন তাঁকে প্রায় ৫০০ মিটার পথ হাঁটানো হয়। অস্বস্তিতে পড়ে রাস্তায় নেমে পায়ে হাঁটলেও পরে অবশ্য তিনি কোনও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। তবে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়।
ওই ঘটনার পরদিনই যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি (সদ্য বহিষ্কৃত) বিশ্বজিত্ রায় ওরফে বুলেটের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকেরা বিদ্যুত্ দফতরের বিভাগীয় অফিসে বিক্ষোভ দেখায়। বুলেট ও তার অনুগামীরা বিভাগীয় ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে দফতরের দুই সহকারি ইঞ্জিনিয়ারকে কলার ধরে শাসানি দেন। চলে ধাক্কাধাক্কি, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। টিভিতে এই দৃশ্য সম্প্রচারিত হওয়ার পরই রাজ্য নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েন। রাতেই বুলেটকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে দল। প্রথমে অভিযোগ করার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেছিলেন বিভাগীয় ম্যানেজার শৈবাল মজুমদার। পরে বুলেটকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরই গভীর রাতে তড়িঘড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শৈবালবাবু। পুলিশের চোখে দু’দিন ফেরার থাকার পর সোমবার দলবল নিয়ে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে বুলেট।
দলের কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, “দলের অনেক কর্মসূচিই আমাদের না জানিয়ে করা হচ্ছে। আর পরে তারা বিভিন্ন দফতরে গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এতে দলের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই দলের জেলা সভাপতিকে বলা হয়েছে দলকে না জানিয়ে কোনও আন্দোলন করার অনুমতি না দিতে। আর অনুমতি না নিয়ে করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।” জেলার আরেক কার্যকরী সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ জানান, দলে আলোচনা না করে কোনও আন্দোলন করা যাবে না। যুব তৃণমূলের সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “দলের অনুমতি না নিয়েই অনেকে নিজের খেয়াল খুশি মতো কর্মসূচি নিচ্ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিও হচ্ছে। তার দায় আমাদের উপর পড়ছে। তাই সকলে যাতে অনুমতি নিয়ে দলের কর্মসূচি গ্রহণ করে সে জন্য জেলা সভাপতিকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।”