প্রশাসনের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেও, সরকারি নির্ধারিত কেজি প্রতি ১৪ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতি। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার উত্তরকন্যায় প্রশাসনের সঙ্গে আলু ব্যবসায়ী সমিতির বৈঠক হয়েছে। যদিও, এ দিনের বৈঠকে দু’পক্ষই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় দাম নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারি দরে আলুর বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও, বৈঠকের কোনও প্রভাব আলুর বাজার দরে পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এ দিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক চললেও তা ফলপ্রসু হয়নি বলে প্রশাসনের একাংশও স্বীকার করে নিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সহ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারা এবং কোচবিহার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন দুই জেলার পুলিশ কর্তারাও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মন্ত্রীর অনুরোধে আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন। ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোয় সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চলতি মাস থেকে ধমর্ঘট শুরু করেন আলু ব্যবসায়ীরা।
বৈঠকের শুরুতেই সরকারি নির্ধারিত ১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলু ব্যবসায়ীরা সর্বনিম্ন ১৮ টাকা প্রতি কেজির কমে আলু খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না বলে মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন। পাইকারি বাজারে নুন্যতম সাড়ে ১৬ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তাঁদের দাবি কৃষকদের থেকে ১০ টাকা কেজি দরে কেনার পরে পরিবহণ সহ অনান্য খরচ, ঝাড়াই বাছাই করার পরে এর কমে আলু বিক্রি সম্ভব নয়। যদিও সরকারের তরফে কোনওভাবেই ১৪ টাকা প্রতি কেজির বেশি আলু বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
বৈঠকের পরে গৌতমবাবু বলেন, “রাজ্যের মানুষ যাতে কোনওভাবে হয়রান না হন সেটা দেখাই আমাদের প্রথম কর্তব্য। আলু এর চেয়ে বেশি দামে আপাতত বিক্রি করা যাবে না। ৩০ অগস্ট কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বৈঠক রয়েছে। তাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে। ততদিন সরকার নির্ধারিত দামেই আলু বিক্রি করতে হবে।”
এদিন বৈঠকে রাজ্যের বাইরে আলু না পাঠানোর নির্দেশ বহাল রয়েছে বলে জানানো হয়। এতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আলু ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, এরাজ্যে উদ্বৃত্ত আলু রয়েছে। বাসিন্দাদের চাহিদা মেটানোর পরেও অন্তত ৩৫ শতাংশ আলু বেচে যাবে। বাইরে পাঠাতে না দিলে তা নষ্ট হয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেছেন। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাস বলেন, “গোটা দেশে কোথাও ৩০ টাকার কমে আলু বিক্রি হয় না। এ রাজ্যে তা করতে হলে ক্ষতিতে বিক্রি করতে হবে। আমাদের ক্ষতি তো হবেই, চাষীরাও আলু চাষে উত্সাহ হারাবে।”
আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজ্যে মজুত্ আলু শেষ না হলে সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন পরেই ক্ষেতে নতুন আলু উঠবে। তার ফলে মজুত্ আলুর নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। উদ্বৃত্ত আলুর কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যে প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। রাজ্যবাসীর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন ২২ হাজার মেট্রিক টন আলু। কিন্তু আমরা কোনও ঝঁুকি নিতে চাই না। আলু উদ্বৃত্ত থাকলে দাম কম হওয়া উচিত।”