চাকরির গুজবে উত্তরকন্যার সামনে লাইন। শুক্রবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ঘটনাটি নতুন নয়। তবে শুক্রবার তা সামাল দিতে পুলিশ তলব করতে হল প্রশাসনকে।
আবেদন পত্র জমা দিলেই উত্তরকন্যায় চাকরির সুযোগ মিলবে। এই রটনায় শুক্রবার সকাল থেকে শিলিগুড়ির কামরাঙ্গাগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় আবেদন করার হিড়িক পড়ে যায়। জীবনপঞ্জী, শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র নিয়ে লাইন দেন এলাকার অসংখ্য তরুণ-তরুণী থেকে মধ্যবয়সী। দুপুরের দিকে কর্মপ্রার্থীদের ভিড়ের এতটাই বেড়ে যায় যে, খবর যায় পুলিশে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচিবালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী।
বেশ কয়েক দিন ধরেই চাকুরি প্রার্থীদের ভিড় হচ্ছিল উত্তরকন্যার সামনে। তবে, এ দিন তা রীতিমতো আতঙ্কিত করে তোলে সরকারি কর্তাদের। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “তবে সামনে নির্বাচন, সবাইকে তো বিমুখ করা যায় না! তাই তাদের দরখাস্ত জমা নেওয়া হয়েছে।”
‘রিসিভ কপি’ নিয়ে হাসতে হাসতেই পিরে গিয়েছেন প্রার্থীরা। তবে মজার ব্যাপার সেই রিসিভ কপিতে কর্মপ্রার্থীদের আবেদনকে ‘অভিযোগ’ হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়েছে। উত্তরকন্যা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পড়াশোনা এবং চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদনের মতো চাকরির জন্য আবেদন করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও জমা দেওয়ার নিয়ম হয়েছে। নবান্নে ইতিমধ্যেই ওই ব্যবস্থা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে চাকরির আবেদনগুলি রাজ্যের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয়ের কাজ শুরুর পরে মাস খানেক ধরে সেই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সেই মতো এ দিনও বেশ কিছু আবেদনও জমা পড়ে। কিন্তু সম্প্রতি আবেদন পত্র জমা দিলেই চাকরি মিলছে এই রটনার কারণে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকা জুড়ে কর্মপ্রার্থীদের মধ্যে হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চাকরির আশায় আবেদন পত্র জমা দিতে দেখা যাচ্ছে সকলকে।
শুক্রবারে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার জন্য উত্তরকন্যার সামনে অন্তত শ’দুয়েক যুবক যুবতী ভিড় করায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারাও। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে তাঁরা উত্তরকন্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও সিপিএমের অভিযোগ, নির্বাচনী আচরণ বিধি ভেঙে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কর্মপ্রার্থীদের উত্তরকন্যায় পাঠিয়ে দিয়ে চাকরির মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছেন। তৃণমূলের তরফে অবশ্য সিপিএমের বিরুদ্ধেই চাকরি পাওয়ার রটনা বাজারে ছড়িয়ে ভোটের সময়ে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি আবেদন নিতে বারণ করে তবে নেওয়া হবে না।”
পাল্টা অভিযোগ করেছেন সিপিএমের ফুলবাড়ি ১ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক কনক ভৌমিক। তিনি বলেন, “চাকরির ভাওতা দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল রাজনীতি করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ জানাব।”