উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারের ১২ হাজারের বেশি প্রাচীন পুথি, সিডি বন্দি করে পুনর্মুদ্রণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পুজোর পর সাড়ে তিন হাজার বই ‘লাইটিং স্ক্যান’ করে সিডি তৈরি ও পুনর্মুদ্রণের কাজ শুরু হবে।
রবিবার গ্রন্থাগার দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ওই কথা জানিয়েছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আর্থিক বরাদ্দের একাংশও ওই কাজে খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “গ্রন্থাগারটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। এখানকার মতো পুরনো বই ও পুথির বিশাল সংগ্রহ, হাতেগোনা ক’টি গ্রন্থাগারেই রয়েছে। এখানকার সংগ্রহে থাকা প্রাচীন পুথি রক্ষার কাজে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার জন্য কোচবিহারের সাংসদের সঙ্গে কথা বলব।” জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাতো জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ২৩ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। এছাড়া গ্রন্থাগারটি জাতীয় মডেল গ্রন্থাগারের তালিকায় স্থান পাওয়ায় কেন্দ্রের তরফেও বরাদ্দ মেলার কথা। সব খাতের সাহায্য নিয়েই ৫০ লক্ষ টাকার ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭০ সালে গ্রন্থাগারটি তৈরি হয়। রাজাদের আমলের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি প্রাচীন পুথিতে ঠাসা। লন্ডন-সহ বিভিন্ন দেশের প্রকাশিত বইপত্র যাতে নিয়মিত সেখানে পৌঁছায় সেজন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কোচবিহারের মহারাজারা। নানা কারণে দুর্লভ ওই সব বইয়ের বেশিরভাগ ফটোকপি করে রক্ষা করার মত অবস্থাতে নেই। প্রাচীন পুথি ছাড়াও সোনার পাতে মোড়ানো পুরানো বাইবেল, আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ব্রজসূচি, মিশরীয় সভ্যতার নিদর্শন, হাতে আঁকা ছবি, মল্লদেব অভিধান, জ্বরনাশন মন্ত্র থেকে উর্দু, ফারসি, আরবী ও ইংরেজি-সহ নানা ভাষার প্রায় ১৫ হাজার প্রাচীন পুথি গ্রন্থাগারের সম্পদ। এর বেশিরভাগই তুলোট কাগজে কিংবা শালপাতা, ভোজ পাতায় লেখা।
নানা সমস্যায় পুথিগুলি নষ্ট হতে বসেছে। লাল শালুতে মুড়ে বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা করে বেশকিছু পুথি রাখা হলেও উদ্বেগ কমছে না। কোচবিহার জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক জানান, সবমিলিয়ে ১২ হাজারের বেশি পুথি সিডি করে পুনর্মুদ্রণ করতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে দু’শো প্রাচীন বই সিডি করা হয়েছে। আরও সাড়ে তিন হাজার বই সিডি করে ফের ছাপা হবে। কোচবিহারের সাগরদিঘি পাড়ে তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগার ভবন। প্রাচীন ও নতুন বইয়ের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। গ্রন্থাগারের আধিকারিক শিশির সরকার জানান, ১৬৩০ থেকে ১৮০০ সালে লেখা প্রচুর প্রাচীন পুথি ও বই এই গ্রন্থাগারে রয়েছে। কোচবিহার লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্য পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “গ্রন্থাগারে নতুন ঘর, ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানোর মতো কিছু কাজ হয়েছে।”