দূষণ-দানবের থেকে বাঁচাতে হবে শহর, একজোট পড়ুয়ারা

প্রিয় শহরকে গ্রাস করতে আসছে দূষণ-দানব। ভয়াবহ দূষণের থাবা থেকে শিলিগুড়িকে বাঁচাতে হবে---এই স্লোগানকে সামনে রেখে জোট বাঁধছেন শহরের পড়ুয়ারা। ক্লাস টেনের প্রেরণা অগ্রবাল থেকে ইংরেজি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সোনম লেপচা কিংবা তাঁর সহপাঠী অরিজিত্‌ দাসেরা এখন দিনরাত লাগাতার প্রচারের পরিকল্পনা করে চলেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আশপাশে চলতে হয় এ ভাবেই। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

প্রিয় শহরকে গ্রাস করতে আসছে দূষণ-দানব। ভয়াবহ দূষণের থাবা থেকে শিলিগুড়িকে বাঁচাতে হবে---এই স্লোগানকে সামনে রেখে জোট বাঁধছেন শহরের পড়ুয়ারা।

Advertisement

ক্লাস টেনের প্রেরণা অগ্রবাল থেকে ইংরেজি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সোনম লেপচা কিংবা তাঁর সহপাঠী অরিজিত্‌ দাসেরা এখন দিনরাত লাগাতার প্রচারের পরিকল্পনা করে চলেছেন। এলাকার নেতা-কর্তারা ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরাতে কতটা কী করতে পারবেন তা নিয়ে পড়ুয়ারা তো বটেই, শহরবাসীদের অনেকেরই সংশয় রয়েছে। কারণ, বাম আমলে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য আড়াই দশকের বেশি সময় মন্ত্রিত্ব করলেও শিলিগুড়ির দূষণের অন্যতম উত্‌সকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তৃণমূল জমানায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়াস্ত ছোটাছুটি করলেও ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরানোর কাজে এখনও পর্যন্ত কোনও সাফল্যের দিশা দেখাতে পারেননি বলে ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের দাবি। তাই নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের ভরসায় না থেকে শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডে নিঃশব্দে জোট বাঁধছে নতুন প্রজন্ম। সামিল হচ্ছেন তাঁদের অভিভাবকরাও। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা, সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন বেঞ্চের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লেখা, সব কিছুর প্রক্রিয়াই চলছে।

Advertisement

তাতে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার জন্য নেমে পড়েছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতির তরফে আইনজীবী রতন বণিক বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি আইনি সহায়তা দেব। সাংগঠনিকভাবেও পাশে থাকার চেষ্টা করব।”

বস্তুত, শহরের গা ঘেঁষে থাকা জঞ্জালের স্তূপে দিনরাত যে আগুন জ্বলছে তার ধোঁয়া, উত্তাপে যে পরিবেশ ক্রমশ বিষিয়ে যাচ্ছে সেটা টের পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। সেবক রোড, হিলকার্ট রোডের ব্যবসায়ীদের তরফেও শহরের জঞ্জাল অপসারণের সুষ্ঠু ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনে সামিল হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ দাস বলেন, “কিছুদিন আগে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পাঁচিল দিয়ে তো জীবাণুদের আটকানো যাবে না। হয় জঞ্জালর বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অপসারণ করে বর্জ থেকে বিদ্যুত্‌ কিংবা সার তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরাতে হবে। আমরাও জোটে রয়েছি।”

যে মূল শহর থেকে মূলত আবর্জনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দাদেরও যে দূষণের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার দায়িত্ব রয়েছে সেটাই এতদিন ধরে বলেছে ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকা। কারণ, শহরের ১১টি নথিভুক্ত বাজার থেকে রোজ ২০০ মেট্রিক টন জঞ্জাল যায়। ৪টি সরকারি হাসপাতাল, ৪০টি নার্সিংহোম, ৬৫টি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক, একাধিক বাস টার্মিনাস, নিয়ন্ত্রিত বাজার, ৪০০টি হোটেল, ৬৫টি বাণিজ্যিক ভবন থেকে রাশি রাশি জঞ্জাল রোজ জমা পড়ে রাস্তাঘাটে। সেখান থেকে সোজা চলে যায় ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। শিলিগুড়ির পুরসভার সাফাই বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেন, “আমাদের সময়ে কাজটা শুরু করেও পারিনি। তা হলে কাজটা হবে না এটা হতে পারে না। শহরের স্বার্থে যে কোনও আন্দোলনে অতীতেও সামিল হয়েছি। এখনও থাকব।”

বাম জমানায় পরিবেশ এবং সাফাই বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত জানান, তাঁরা বহু চেষ্টা করেও জঞ্জাল থেকে সার তৈরির কাজটা শুরু করাতে পারেননি। এমনকী, তৃণমূল জমানায় সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ ছিলেন যিনি, সেই দুলাল দত্ত জানান, তাঁরা ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্‌ প্রকল্প তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েও শেষ পর্যন্ত নানা কারণে এগোতে পারেননি।

নেতা-কর্তাদের এমন অবস্থা দেখেই হাইকোর্ট ও সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। সে কথা জানেন রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শিলিগুড়ি শাখার আধিকারিক গৌতম পালও। তিনি বলেন, “দূষণ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও হয়েছে। সেই মতো ডাম্পিং গ্রাউন্ড ঘিরে পাঁচিল দেওয়া, গাছ লাগানোর মতো নির্দেশ দিয়েছে। সে কাজ কতদূর হয়েছে তা দেখে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

সরকারি তরফে আশ্বাস নতুন কিছু নয়। বিনীতা, শ্রেয়া, অর্ক, শুভদীপের মতো কলেজ পড়ুয়ারা বললেন, “আমরা সোশ্যাল নেওটওয়ার্কিং সাইটে দুনিয়া জুড়ে প্রচার করছি। সর্বত্র চিঠি পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ চাইব। এই ভয়ঙ্কর দূষণ বন্ধ না হলে একদিন গোটা শিলিগুড়িকে শ্বাসকষ্টে ভূগতে হতে পারে এটা সকলকে জানাব। সকলে মিলে জোট বেঁধে এগোলে কাজ হবেই।”

নতুন প্রজন্মের উদ্দীপনা দেখে পুরসভা-প্রশাসন ‘গয়ংগচ্ছ মনোভাব’ ঝেড়ে ফেলে কবে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সমস্যা মেটাতে আসরে নামে সেটাই এখন দেখতে চান শিলিগুড়ির ভুক্তভোগীরা।


(শেষ)

(অভিভাবকদের অনুরোধে ছাত্রছাত্রীদের নাম পরিবর্তিত)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার

থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।

Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।

অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,

শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।

প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:

www.facebook.com/anandabazar.abp

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement