তৃণমূল প্রধানের বাড়ি ভাঙচুর, অভিযুক্ত কর্মীরা

পুলিশের সামনেই দলের প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে কোচবিহারের শীতলখুচির ছোট শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চারহাট বাজারে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে গত দু’দিন ধরে ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১২
Share:

পুলিশের সামনেই দলের প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে কোচবিহারের শীতলখুচির ছোট শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চারহাট বাজারে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে গত দু’দিন ধরে ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলছে।

Advertisement

শনিবার রাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আনোয়ারা বেগমের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘরের আসবাবপত্র লুঠ করা হয়। আনোয়ারা বেগমের শ্বশুর সামাদ মিয়াঁ তৃণমূলের ছোট শালবাড়ি অঞ্চল কমিটির সভাপতি। তিনিও একই বাড়িতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রধান। শনিবার জলপাইগুড়ির গড়ালবাড়িতে তৃণমূলের অঞ্চল সম্মেলন চলার সময়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এক নেতাকে মারধর করা হয়। জখম ওই নেতাকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও ফল মিলছে না বলে দাবি করেছে কোচবিহারের তৃণমূলের এক গোষ্ঠী। যদিও জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

শনিবার রাতে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর সমর্থকেরা সশস্ত্র অবস্থায় ছোট শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সামাদ মিয়াঁর দাবি, “পুলিশ পিছনেই ছিল। তবু কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমরা ভয়ে লুকিয়ে পড়ি। বাড়িঘর ভেঙে বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ওরা চলে যায়।” সাহের আলি গোষ্ঠীর পাল্টা দাবি, ওই রাতেই তাঁদের প্রায় ছ’টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাড়ি থেকে গবাদি পশুও নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০ জন পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন। সকলেই তৃণমূলের। আনোয়ারা বেগমকে প্রধান নির্বাচন করার পর থেকেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় বলে অভিযোগ। আবেদ আলি এবং সাহের আলি মিঞার দু’টি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাসন প্রকল্প, গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠিকাদারি নানা বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মতবিরোধ শুরু হয়। দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে বলে অভিযোগ। মাস চারেক আগে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় দলেরই এক ঠিকাদার নেতা-সহ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ হয়। আবেদ আলির অভিযোগ, “ওই ঘটনাতে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি। সাধারণ কর্মীরা বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। পুলিশে জানিয়েও ফল মিলছে না।” আবেদ আলির অনুগামীদের একাংশের অভিযোগ, অভিযুক্তদের পিছনে সাহের আলির অনুগামীদের মদত রয়েছে। সাহের আলি বলেন, “আমার নামে মিথ্যে বলা হচ্ছে। আমি কাউকে প্রশ্রয় দিইনি। কেউ অপরাধ করলে পুলিশ গ্রেফতার করুক।”

প্রধানের বাড়িতে হামলা প্রসঙ্গে তৃণমূলের কৃষক সভার সভাপতি সাহের আলি মিঞাঁর পাল্টা অভিযোগ, “ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং দলের অঞ্চল সভাপতি নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাতে সাধারণ কর্মীরা ক্ষুব্ধ। আমাদের সাধারণ কর্মীদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়ে রয়েছেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিক।”

অন্যদিকে, শনিবার গড়ালবাড়ি হাইস্কুলে তৃণমূলের গড়ালবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার সম্মেলন ছিল। সম্মেলনে মহম্মদ সুকুরুল্লা নামে এক নেতার বক্তৃতার পরে মঞ্চে গোলমাল শুরু হয়। সে সময়ে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রাতে তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রদেশ তৃণমূলের সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “সুকুরুল্লা গড়ালবাড়ি এলাকার সবচেয়ে পুরনো তৃণমূল কর্মী। তাঁকে এভাবে মারা ঠিক হয়নি।”জখম সুকুরুল্লার বক্তব্য, “যারা দলের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তুলছে, তারাই আমাকে মেরেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পুরো বিষয়টি জানাব।” গড়ালবাড়ি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বাবলু সাজাহান পাল্টা দাবি করে বলেন, “কাউকে কোনও মারধর করা হয়নি। একই ব্যক্তি দু’বার বক্তৃতা করতে পারেন না। তাই তাঁকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement