টয়ট্রেন দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় ট্রেনে থাকা রেল কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন যাত্রীরা। অথচ এখনও তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঘটনার দিন গার্ড চিত্কার করে ট্রেন থেকে নিচে নেমে পড়েছিলেন। পরে একইভাবে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন চালক-সহ তিনজন। উল্টে যাত্রীদের মধ্যে একজন গিয়ে গার্ডের কামরার ব্রেক আটকে ট্রেনটি দাঁড় করান। এদের কারও বিরুদ্ধেই কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি, তদন্তের সময় সবার সঙ্গে কথাও বলা হয়নি। এই প্রসঙ্গে রেলের নিউ জলপাইগুড়ির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, “তদন্তের কাজ এখনও চলছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে রিপোর্ট দেখে তবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনার পর খবর পেয়ে রেলের চিকিত্সক সেখানে পৌঁছে ছিলেন। জখমদের রেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করানো হয়েছে। তা ছাড়া মৃত মহিলার বা তাঁর পরিবারের টিকিট ছিল না। টিকিটের নথিতে তাঁর কোনও নাম মেলেনি। ঘটনায় মৃত মলি পালের আত্মীয় সুমিতাভ পালের অভিযোগ, “রেলের তরফে ঘটনার দিন থেকেই সহযোগিতা করা হচ্ছে না।” মলিদেবীর ভাই অরুণাভ পাল জানান, শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনে চাপলেও দেরিতে স্টেশনে পৌঁছানোয় টিকিট কাটা যায়নি। রেলের টিকিট পরীক্ষককে টিকিট করাতে ফি দেওয়া হয়। তিনি তিনধরিয়ায় গিয়ে টিকিট দেবেন বলেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। পরে আর টিকিট দেওয়া হয়নি। বাকি যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি সামনে আসতে পারে। ঘটনার পর রেলের সাহায্যও মেলেনি।
ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা পেশায় চিকিত্সক নিকিতা সাহা এবং তাঁর মেয়ে। নিকিতা দেবী বলেন, “চলন্ত ট্রেন থেকে আচমকা যাত্রীদের ছেড়ে চালক, গার্ড, টিকিট পরীক্ষক এবং কোচ অ্যাটেন্ডেন্ট সকলেই নেমে পড়েছিলেন। আমি নিজে তা দেখেছি। ট্রেন দ্রুত চলতে শুরু করলে আমরা ভেবেছিলাম চালক আছে সামলে নেবে। পরে চালককে বাইরে রাস্তায় দেখে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।”
গত ২৬ জানুয়ারি কার্শিয়াং শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চূনাভাটির কাছে আচমকা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোরে চলতে থাকে টয়ট্রেন। ট্রেনের এয়ারব্রেকও ঠিকঠাক কাজ করেনি বলে অভিযোগ। গার্ড ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করাতে না পেরে লাফ দিয়ে নেমে পড়েন বলে অভিযোগ। আতঙ্কে কলকাতার বেলেঘাটার বাসিন্দা মলি পাল নামে এক মহিলা ট্রেন থেকে লাফ দিলে গুরুতর জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। যাত্রীদের অনেকেই জানান, ট্রেনটি গয়াবাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও দেরিতে ট্রেন ছেড়েছে বলে তিনধরিয়া পর্যন্ত যায়। অথচ সেখানে ১ ঘন্টা ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল। কেন সেখানে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকল তা স্পষ্ট নয়।